করোনাবিধ্বস্ত জনপদে আজ পহেলা বৈশাখ
১৪ এপ্রিল ২০২১ ০০:৪৭
ঢাকা: আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল), বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৭ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হচ্ছে নতুন বছর বঙ্গাব্দ ১৪২৮। আজ সকালের ভোরের আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। স্বাভাবিকভাবেই সে স্বপ্ন করোনাভাইরাসমুক্ত নতুন বিশ্ব, নতুন বাংলাদেশের।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাঙালিরা করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়ে আজ দ্বিতীয়বারের মতো নতুন বছরকে বরণ করে নেবে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। কেননা, গোটা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশকেও তছনছ করে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস! মানুষের জীবন বাঁচাতে দেওয়া হয়েছে কঠোর সব বিধিনিষেধ।
এমন কোনো দেশ, শহর, জনপদ নেই— যেখানে হানা দেয়নি বৈশ্বিক মহামারি নভেল করেনাভাইরাস। টানা এক বছরের নির্দয় ছোবলে ভয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সারাপৃথিবীর মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, ঠিক সেই সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ফলে ফের স্থবির হওয়ার পথে গোটা পৃথিবী। থমকে যেতে বসেছে ব্যাবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়াবিশ্ব।
এমন এক বিশ্ববাস্তবতায় বাঙালি তথা ভারতীয় উপমহাদেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর সামনে হাজির হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৮। বাংলা নতুন বছরের জন্য যখন এই লেখা তৈরি হচ্ছিল, তার একটু আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ এ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬০২৮ জন, মারা গেছে ৬৯ জন!
এই মৃত্যুর মিছিল, আক্রান্তের খবর এবং কঠোর লকডাউনের মধ্যে সঙ্গত কারণেই বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে ঢাকার অলি-গলি-রাজপথ, রমনার উদ্যান, চারুকলার বকুলতলা, শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল— কোথাও থাকবে না উৎসবের ছোঁয়া। শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশেই পহেলা বৈশাখ পালনের ক্ষেত্রে থাকবে কৃচ্ছতা।
লাল পেড়ে শাড়ি, মাথায় ফুলের টায়রা, হাতে কাঁচের চুড়ি, খোপায় রঙিন ফুল, কানে মাটির দুল, লালে-সাদায়, বর্ণিল সুতায় বোনা পাঞ্জাবি-ফতুয়া, কাঁধে ঝোলানো বাহারি রঙের গামছা, হাতে ধরা তালের পাখা-একতারা-দোতারা— কিছুই চোখে পড়বে না পহেলা বৈশাখে!
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চন্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারাদেশ। আর সেই আয়োজন শ্রেণিপেশা, ধর্ম-বর্ণ-বয়স নির্বিশেষে সব বাঙালির।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর