Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বর্ষবরণে যৌন হয়রানি: ৬ বছরেও হয়নি ১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ!

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ এপ্রিল ২০২১ ১৩:০৮

ঢাকা: পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যৌন হয়রানির ঘটনার দায়ের করা মামলার বিচার কার্যক্রম ছয় বছরেও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাহফুজা পারভীনের আদালতে বিচারাধীন। দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচার কার্যক্রমে নেই কোনো অগ্রগতি।

বিজ্ঞাপন

মামলাটির একমাত্র আসামি কামালের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৯ জুন চার্জ গঠন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলায় একজনেরও সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। এজন্য আদালত চার্জশিটভুক্ত ১ থেকে ৫ নম্বর সাক্ষীর বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। এজন্য আদালতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে আসে। ফলে ওইদিনও সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হলে মামলাটির শুনানি হবে বলে জানা গেছে। বর্তমানে মামলার একমাত্র আসামি কামাল হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বর্তমানে মামলাটি বেগম মাহফুজা পারভীনের আদালতে বিচারের জন্য বদলি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। মামলার বাদী পুলিশ। আবার অধিকাংশ সাক্ষীই পুলিশ। তারা অনেকে শাহবাগ থানায় কর্মরত ছিলেন। এখন অনেকে অনেক জায়গায় বদলি হয়ে গেছেন। সাক্ষীদের আদালতে আনার দায়িত্বও কিন্তু পুলিশের। আমরা আদালত থেকে সাক্ষীদের হাজির করতে সমন পাঠাচ্ছি। সাক্ষীদের আনার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘গতবছর লকডাউনের কারণে আদালত ছুটিতে ছিল। আবার করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সাক্ষী হাজিরের চেষ্টা করব। এখন মামলাটির তারিখও পড়ছে প্রতি মাসে। সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সাক্ষী হাজির করে মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করার।’

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান জানান, মামলার এজাহারে কামালের নাম ছিল না। পুনঃতদন্তে চার্জশিটে তার নাম এসেছে। আসামি লালবাগের খাজী দেওয়ানে ফুটপাতে সবজির ব্যবসা করে। যেহেতু সে ডায়াবেটিস রোগী, এজন্য ওইদিন সে বের হয়েছিল হাঁটাহাটি করার জন্য। ওই ঘটনা ঘটার পরে জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর কামাল সেখানে হাঁটাহাটি করতে যায়। সেখানে যে কোনো ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে কামাল কোনো কিছু জানতো না। সে হেঁটে আসছিল। তখন সেও ওই ভিডিও ফুটেজে ঢুকে যায়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা সেই ফুটেজ দেখে তাকে গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে এমন কিছু আসেনি যে, সে কাউকে ধরছে, টানছে বা শ্লীলতাহানি করছে। ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৃত আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেনতেনভাবে চার্জশিট দিয়ে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে মামলায় সম্পৃক্ত করেছে। প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার না করে অযথা, ভুলভাবে তাকে মামলায় গ্রেফতার করেছে। আমরা ন্যায় বিচার আশা করছি। আর ন্যায় বিচারে আসামি খালাস পাবে বলেই প্রত্যাশা।’

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি এলাকায় কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়। ওই ঘটনায় ভিকটিমদের পক্ষ থেকে কেউ মামলা না করায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। শাহবাগ থানার পুলিশ মামলাটি কয়েকদিন তদন্তের পরই তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়।

একই বছরের ১৭ মে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আটজন যৌন হয়রানিকারীকে শনাক্ত ও তাদের ছবি পাওয়ার কথা জানান তৎকালীন পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক। শনাক্তকৃতদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ।

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর আসামিদের নাম-ঠিকানা না পাওয়ার অজুহাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর শনাক্তকৃত আসামিদের মধ্যে মো. কামালকে (৩৫) গ্রেফতার করে মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়। ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। পুনঃতদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক একমাত্র আসামি কামালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

২০১৭ সালের ১৯ জুন ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার ওই আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। মামলার চার্জশিটে ৩৪ জন সাক্ষীর কথা উল্লেখ করা হয়।

সারাবাংলা/এআই/পিটিএম

টিএসসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বিচার মামলা যৌন হয়রানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর