Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোশাক কারখানা খোলা রাখার পক্ষে শ্রমিকরাও

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ এপ্রিল ২০২১ ১৩:০৫

ঢাকা: করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত ১৩ দফা বিধিনিষেধের মধ্যেও পোশাকসহ দেশের সকল শিল্প কারখানা খোলা থাকছে। পোশাক মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রমিকদের একটি অংশও চান লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা থাকুক। রোজা ও ঈদ সামনে থাকায় বেতন ও বোনাস বঞ্চিত না হওয়ার প্রেক্ষিতে তারা কারখানা খোলা রাখার পক্ষে।

তবে শ্রমিক নেতাদের একটি অংশ মনে করেন সাধারণ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলে কারখানা খোলা রাখা মানবাধিকারের লঙ্ঘণ। কারণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মালিক শ্রমিক ভেদাভেদ নেই। শ্রমিক নেতাদের আরেকটি অংশের দাবি, স্বাস্থ্যবিধির বিন্দুমাত্র ব্যতয় ঘটলে খোলা থাকা কারখানা সরকারের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামনে রোজা ও ঈদ থাকায় পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার পক্ষে নন তারা। কারণ কারখানা বন্ধ থাকলে তারা বেতন ও বোনাস বঞ্চিত হবেন। পরিবার চালিয়ে নিতে তারা এই মুহূর্তে কারখানা বন্ধ চান না। তবে মধ্য পর্যায়ের শ্রমিকরা বলছেন, পোশাক কারখানা খোলা রেখে লকডাউন অযৌক্তিক। তাদের অনেককেই গণপরিবহনে করে অফিসে যেতে হয়। মালিকপক্ষ দাবি করলেও সবার জন্যে কারখানা থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত হয়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, কারখানা বন্ধ থাকুক আমরা এটা চাই না। আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চলুক। কোনো কারখানায় যদি স্বাস্থ্যবিধির বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটে সঙ্গে সঙ্গে ওই কারখানা যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, করোনায় ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের বেতন কাটা হবে। সামনে রোজা ও ঈদ আছে। সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের মধ্যে পোশাক কারখানা পড়লে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা গ্রামের দিকে ছুটবে। ফলে কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচক হিসাবে দেখছি। তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে।

তবে রনির সঙ্গে একমত নন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার। সারাবাংলাকে এই শ্রমিক নেত্রী বলেন, এই লকডাউন শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে গতবারের তামাশার পুনরাবৃত্তি। যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, গত বারের চেয়ে বেড়ে গেছে, সেখানে কারখানা খোলা রেখে লকডাউন কাম্য নয়। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, পরিবহন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা না দিয়ে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এই লকডাউন তামাশা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, মালিকপক্ষ কারখানা খোলা রেখে আবারও নতুন প্রণোদনা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা শ্রমিকদের বিন্দুমাত্র স্বার্থ দেখছে না।

জলি তালুকদারের মতোই মত দিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সবার জন্যই সমান। একই দেশে দুই রকমের স্বাস্থ্যবিধি হতে পারে না। মরণঘাতিতে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা মানবাধিকারের লঙ্ঘণ। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না। কারণ করোনা ভাইরাসে মালিক-শ্রমিক সবাই আক্রান্ত হয়।

এদিকে বিজিএমইএর নব নির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বলেছি শ্রমিকদের গড় বয়স ২৩.৯ বছর। এ বয়সীদের করোনা আক্রান্তের হার দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এ কারণে শ্রমিকরা কম আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারকে এটি বুঝিয়েছি। এছাড়া ১৪ তারিখ থেকে গণ পরিবহন বন্ধ থাকবে। কারখানা ছুটি দিলে শ্রমিকরা ভোগান্তিতে পড়বে। শ্রমিকদের ৯০ শতাংশ কারখানার আশপাশে থাকে। ফলে তারা গণপরিবহনেও যাতায়ত করবে না। সরকারকে এটি বুঝানোর ফলে সরকার সম্মত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা কারখানায় আগের চেয়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করবো। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের আরও সচেতন করা হবে। আর ছুটি পেয়ে শ্রমিকরা গ্রামে গেলে গ্রামেও করোনা সংক্রমের আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে কারখানা খোলা থাকছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

মন্তব্য জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র পরিচালক ফজলে শামীম এহসান সারাবাংলাকে বলেন, যেসব শ্রমিক নেতা কারখানা চালু রাখা নিয়ে সমালোচনা করছে তাদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জ্ঞান কম আছে বলে আমরা মনে করি। শ্রমিকরা কোন পরিবেশে ছোট্ট রুমে ৬ থেকে ৭ জন গাদাগাদি করে থাকে তা হয়তো তাদের জানা নেই। শ্রমিকদের বাসার চেয়ে কারখানার পরিবেশ তো উন্নত। যেসব বাসায় শ্রমিকরা থাকে সেখানে তাদের পক্ষেও সারাদিন থাকা সম্ভব নয়। যারা সমালোচনা করছে তারা মূলত সমালোচনা করার জন্যই করছে। বাংলাদেশের চরম শত্রুও চাইবে না নির্মাণকাজ ও কারখানা বন্ধ রেখে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ১ থেকে দেড় কোটি মানুষ গ্রামের দিকে ছুটে যাক। কারখানা বন্ধ তারপরও তো গ্রামের দিকে সাধারণ মানুষের স্রোত থামানো যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, কারখানা চালুর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়া। প্রবেশের সময় হাত ধোঁয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। এছাড়া একটি মেশিন থেকে অন্য মেশিনের দূরত্ব ৩ মিটার। এক্ষেত্রে সুপারভাইজর লেভেলের কেউ যাতে শ্রমিকদের কাছাকাছি না যায় সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এএম

টপ নিউজ পোশাক কারখানা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর