Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৬ দিনেই শনাক্ত ১ লাখ

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ এপ্রিল ২০২১ ১০:১৪

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে সাত লাখ। এর মধ্যে সবশেষ একলাখ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১৬ দিনে। এর আগের ছয় লাখ সংক্রমণ শনাক্তের ক্ষেত্রে একলাখ সংক্রমণ এত কম দিনে কখনো শনাক্ত হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ বুধবারের (১৪ এপ্রিল) তথ্য বলছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ১৮৫ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ৪০৩ দিনের মাথায় সংক্রমণ সাত লাখ ছাড়াল। এর মধ্যে সবশেষ এক লাখ সংক্রমণই শনাক্ত হয়েছে সবচেয়ে কম সময়ে।

বিজ্ঞাপন

করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য

গত বছরের ২১ জানুয়ারিতে দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের লক্ষ্যে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর ৮ মার্চ প্রথম জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির উপস্থিতি রয়েছে। ওই দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, ইতালি ফেরত দুজন এবং তাদের একজনের পরিবারের আরেক সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

এরপর ১৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে আর কেউ শনাক্ত না হলেও ১৫ মার্চ শনাক্ত হন দু’জন। ১৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ১৪ দিনের মধ্যে আরও তিন দিন কোনো ব্যক্তি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হননি। এরপর আর কখনোই শূন্য সংক্রমণ দেখা যায়নি বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৫ এপ্রিল শনাক্ত হন ১৮ জন। সেদিনই প্রথম দুই অঙ্কে পৌঁছায় শনাক্তের সংখ্যা। ৯ এপ্রিল ১১২ জন শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো একদিনে সংক্রমণ শতকের ঘরে পৌঁছায়। ওই মাসেই ২৪ এপ্রিল তা ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ’র ঘর। একদিনে প্রথম হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১১ মে (এক হাজার ৩৪ জন)।

বিজ্ঞাপন

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা এক লাখে পৌছায় ১৮ জুন। সে হিসাবে ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের ১০৩ দিন পরে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। ১৮ জুনের ৩০ দিন পরে অর্থাৎ ১৮ জুলাই দেশে সংক্রমণের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়ায়। শেষ একলাখ সংক্রমণ শনাক্তের আগ পর্যন্ত এটিই ছিল দেশে সবচেয়ে কম সময়ে এক লাখ সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড। ১৮ জুলাইয়ের ৩৯ তিন পরে ২৬ আগস্ট দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়ায়। দেশে চার লাখ কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ছাড়ায় ২৬ অক্টোবর। সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা তিন লাখ থেকে চার লাখে পৌঁছায় ৬১ দিনে।

দেশে পাঁচ লাখ কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ছাড়ায় আরও ৫৫ দিন পর, ২০ ডিসেম্বর। আর দেশে ছয় লাখ কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ছাড়ায় গত ২৯ মার্চ। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পাঁচ লাখ সংক্রমণ শনাক্তের পর পরবর্তী একলাখ সংক্রমণ শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ৯৯ দিন।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছিল দ্রুতগতিতে। সেই গতি এতটাই দ্রুত হয়ে পড়ে যে ২৯ মার্চের পর মাত্র ১৬ দিনে আরও একলাখ কোভিড সংক্রমিত ব্যক্তি যোগ হন মোট তালিকায়। আর তাতেই ১৪ এপ্রিল দেশে করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে গেছে সাত লাখের ঘর।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যা করণীয়

দেশে ২০২১ সালের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে দ্রুতগতিতে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়েও তারা সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়বেই। আর তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। সংক্রমণের উৎস ও উৎপত্তিস্থল বিশ্লেষণ করে তারপর সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সরকারের আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডা. মোশতাক বলেন, সরকার এর আগে আট-দশ দিনের জন্য কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছিল, সেগুলো সবাই খুব অনুসরণ করেছেন— এটি বলা যায় না। এর মধ্যে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে আজ (বুধবার) থেকে। গত ৮-১০ দিনের বিধিনিষেধের কোনো প্রভাব পড়েছে কি না, তা জানতে হয়তো আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে। তবে কঠোর বিধিনিষেধের বিকল্প নেই। আজ প্রথম দিন (পহেলা বৈশাখ) সরকারি ছুটির দিন ছিল। সে কারণে হয়তো মানুষজনের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা খুব একটা দেখা যায়নি। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভালো।’

দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো মানুষের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা। নইলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কমানো কঠিন। করোনাভাইরাসের সমস্যাটি এমন, প্রতিরোধ করেই একে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা না পারলে পরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। এখনো যদি আমরা এই বার্তাটি না বুঝি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি, তাহলে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

সরকারের বিধিনিষেধ জারির বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনার অভাব রয়েছে বলে মনে করে ডা. নজরুল। তিনি বলেন, সরকার দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করছে— এমন প্রচারণা শুনছি। কিন্তু এই লকডাউন কী, সেটিই বুঝতে পারছি না। আমার ধারণা, জনগণের কাছেও এই ধারণাটি স্পষ্ট নয়। আর সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলে সেগুলো জনগণকে মানতে হবে। ফলে জনগণের কাছে নির্দেশনা স্পষ্ট করতে হবে। তারা মানছে কি না, সেটি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। যারা মানছে না, তারাও যেন মানতে বাধ্য হয়, এমন ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে ডা. নজরুলও বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘সবাই যদি মাস্ক পরে, সবাই যদি অন্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো ঠিকমতো মেনে চলে, তাহলেই কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব ৯০ শতাংশের বেশি। ফলে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে, না ধুয়ে চোখে-নাকে-মুখে হাত দেওয়া যাবে না, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। সবাই এগুলো অনুসরণ করলে পরিস্থিতি এমনিতেই নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা লিমাও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণেই জোর দিতে বলছেন সবাইকে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রধানতম করণীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বিশেষ করে মাস্ক পরার অভ্যাসটা চালু করা। কেউ মাস্ক পরে যদি বাইরে যান, তিনি হাঁচি-কাশি দিলেও কিন্তু মাস্ক তার কাছ থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে। সেইসঙ্গে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে তার কাছ থেকে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা একেবারেই কমে যাবে। ফলে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলুন। এর সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধিটাও মেনে চলুন।’

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

করোনাভাইরাস করোনাভাইরাস কোভিড-১৯

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর