Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শতভাগ’ শ্রমিক দিয়েই চলছে পোশাক কারখানা

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ এপ্রিল ২০২১ ২০:০৮

ঢাকা: দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘শতভাগ’ শ্রমিক দিয়েই চলছে পোশাক কারখানা। কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি সাধারণ অন্যান্য দিনের মতোই। কোনো কোনো মালিক বলছেন, শ্রমিকদের উপস্থিতি সাধারণ দিনের মতো থাকলেও শতভাগ ক্যাপাসিটি নিয়ে কারখানা চলছে না। কেউ কেউ বলছেন, করোনার কারণে কিছুটা হলেও লোকবল কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, পেটের তাগিদেই শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারখানার আশেপাশের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে পারলেও দূরের শ্রমিকরা ভোগান্তিতে রয়েছেন। মালিক, শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ সময়েও আমাদের কারখানায় পাঁচ থেকে সাত ভাগ লোক কম থাকে। তাই শতভাগ শ্রমিক-কর্মচারী দিয়ে কারখানা চলছে তা ঠিক নয়। করোনার কারণে আমরা নিজেরাই কিছু লোকবল কমিয়েছি। অটোমেশনের কারণেও লোকবল কিছুট কমেছে। এর মানে এই নয় তাদের চাকরি গেছে। তাদের অনত্র বা অন্য বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। কারখানায় আমরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদন কাজ চালিয়ে যেতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রবেশের মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রয়েছে। কারখানার ভেতরেও সব নিয়ম মানা হচ্ছে। পোশাক ও বস্ত্রখাতে শ্রমিক পর্যায়ে করোনার আঘাত এখনো তেমনভাবে আসেনি। তাদের বয়স ও কর্মক্ষমতা বেশি থাকায় আমরা এখনো নিরাপদ আছি। তাই শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা স্বাস্থ্যবিধিকে প্রধান্য দিয়েই উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শতভাগ শ্রমিক দিয়ে কারখানা আগেও চলেনি, এখনো চলছে না। করোনার প্রথম ধাক্কার পর থেকেই কারখনায় শতভাগ শ্রমিক নেই। বেশিরভাগ কারখানা এখন শতভাগ ক্যাপাসিটি দিয়ে চলছে না। তবে গেল কয়েক মাস ধরে কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি যেমন ছিল এখনও তেমন রয়েছে।

কারখানায় শ্রমিক উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র পরিচালক ফজলে শামীম এহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গার্মেন্টেসে শ্রমিকদের উপস্থিতি শতভাগ। শতভাগ শ্রমিক দিয়েই গার্মেন্টস চলছে। সাধারণ সময়ে গার্মেন্টেসে যেমন শ্রমিক থাকে, এখনো শ্রমিকদের উপস্থিতি সে রকমই। কারণ শ্রমিকরা গার্মেন্টেসের আশেপাশেই থাকে, তারা পায়ে হেটে কারখানায় আসে। ফলে তাদের কারখানায় যাতায়াতে লকডাউনের কোনো প্রভাব নেই।’

তিনি বলেন, ‘অফিসারদের মধ্যে সিনিয়র লেভেলের যারা তারা গাড়ির সুবাধি পান। কিন্তু জুনিয়র লেভেলের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে একই বাসে আসতে পারে না। আবার এখন লকডাউনের কারণে মোটরবাইকেও আসতে পারছে না। মোটরবাইকের ভাড়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই জুনিয়র লেভেলের কর্মকর্তাদের কারখানায় আসতে কষ্ট হচ্ছে।’

আরও পড়ুন:

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা আর চ্যালেঞ্জ থাকলেও শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। হাজিরার উপরে বেতন ও বোনাস নির্ভর করে। করোনায় মৃত্যঝুঁকির চেয়ে তাদের কাছে এখন বেতন-বোনাস বেশি প্রাধান্য। বলা যায়, শতভাগ শ্রমিকই কাজে যোগ দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিদের বেশিরভাগ কারখানার আশেপাশে থাকে। তারা কাজে যোগ দিতে বেগ না পোহালেও দূরের শ্রমিকরা কষ্টে আছেন। অনেক কারখানা নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করেনি।’

একই সুরে কথা বলেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদারও। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রায় শতভাগ শ্রমিক দিয়েই কারখানা চলছে। মালিকরা বড় গলায় বললেও কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। শ্রমিকরা কারখনায় একসঙ্গে প্রবেশ করছে এবং একইসঙ্গে বের হচ্ছে। কাজের সময়ও একজন আরেকজন থেকে বেশ দূরত্বে থাকছেন- এমনটি নয়।’

করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া সরকার ঘোষিত চলমান কঠোর বিধিনিষেধে পোশাকসহ দেশের সব শিল্প কারখানা খোলা রয়েছে। পোশাক মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রমিকদের একটি অংশও চায় ‘লকডাউনে’ পোশাক কারখানা খোলা থাকুক। রোজা ও ঈদ সামনে থাকায় বেতন ও বোনাস বঞ্চিত না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা কারখানা খোলা রাখার পক্ষে। তবে শ্রমিক নেতাদের একটি অংশ মনে করেন সাধারণ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলে কারখানা খোলা রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কারণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকে ভেদাভেদ নেই। শ্রমিক নেতাদের আরেকটি অংশের দাবি, স্বাস্থ্যবিধির বিন্দুমাত্র ব্যতয় ঘটলে খোলা থাকা কারখানা সরকারের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে।

এদিকে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা ও সামনে ঈদ থাকায় পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার পক্ষে নন তারা। কারণ কারখানা বন্ধ থাকলে তারা বেতন ও বোনাস বঞ্চিত হবেন। পরিবার চালিয়ে নিতে তারা এই মুহূর্তে কারখানা বন্ধ চান না। তবে মধ্যম পর্যায়ের শ্রমিকরা বলছেন, পোশাক কারখানা খোলা রেখে ‘লকডাউন’ অযৌক্তিক। তাদের অনেককেই গণপরিবহনে করে অফিসে যেতে হয়। মালিকপক্ষ দাবি করলেও সবার জন্যে কারখানা থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত হয়নি।

এদিকে বিজিএমইএ’র নব নির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান সারাবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমরা বলেছি শ্রমিকদের গড় বয়স ২৩ দশমিক ৯ বছর। এ বয়সীদের করোনা আক্রান্তের হার দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। এ কারণে শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। সরকারকে এটি বুঝিয়েছি। এছাড়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কারখানা ছুটি দিলে শ্রমিকরা ভোগান্তিতে পড়বে। আর কারখানার পরিবেশ শ্রমিকদের বাসায় চেয়ে উন্নত। শ্রমিকদের ৯০ শতাংশ কারখানার আশেপাশে থাকে। ফলে তারা গণপরিবহনেও যাতায়ত করবে না। সরকারকে এটি বুঝানোর ফলে সরকার সম্মত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পোশাকসহ সব শিল্প-কারখানা লকডাউনে চালু থাকবে। বাণিজ্যিক পরিবহনও চালু থাকবে। আমরা কারখানায় আগের চেয়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের আরও সচেতন করা হবে। আর ছুটি পেয়ে শ্রমিকরা গ্রামে গেলে গ্রামেও করোনা সংক্রমের আশঙ্কা বেশি ছিল। সব মিলিয়ে কারখানা খোলা থাকছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই ‘

কারখানায় কী ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?- জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র পরিচালক ফজলে শামীম এহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানা চালুর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়া। প্রবেশের সময় হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। এছাড়া একটি মেশিন থেকে অন্য মেশিনের দূরত্ব তিন মিটার। এক্ষেত্রে সুপারভাইজর লেভেলের কেউ যাতে শ্রমিকদের কাছাকাছি না যায় সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেনে, ‘শ্রমিকদের ৯০ শতাংশ কারখানার আশেপাশে থাকেন। তারা পায়ে হেঁটেই কারখানায় আসেন। বাকি ১০ ভাগের জন্য কারখানার পক্ষ থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কেউ নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করতে না পারে তার কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের ছয়টি টিম মাঠে কাজ করবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেবো না।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

করোনা কারখানা গার্মেন্টস পোশাক শ্রমিক শতভাগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর