Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রিকশার নগরী চট্টগ্রাম, ভোগান্তি যথারীতি কর্মজীবীদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ এপ্রিল ২০২১ ২০:৩৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউনের’ দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রাম ছিল রিকশার নগরী। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে দ্বিতীয়দিন মোটর সাইকেল কম দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যথারীতি কর্মস্থলে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমজীবীদের।

বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে নগরীর লাভ লেইন মোড়, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, চেরাগির মোড়সহ আশপাশের এলাকা ঘুরে প্রথমদিনের চেয়ে বেশি রিকশা চোখে পড়েছে। নির্বিঘ্নে চলাচল করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যাটারি চালিত রিকশাও। হাতেগোনা দু’য়েকটি বাস-অটোরিকশাও দেখা গেছে। ট্রাক-পিকআপ ভ্যানও কয়েকটি চোখে পড়েছে। বিভিন্ন কল-কারখানা, প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগানো প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস আগেরদিনের চেয়ে অনেক বেশি দেখা গেছে।

সকালে পোশাক কারখানার শ্রমিক, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী, ব্যাংককর্মীসহ অনেক কর্মজীবীকেই যানবাহনের অপেক্ষায় দেখা গেছে। কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া গুণে রিকশায় গেছেন। আবার গন্তব্যে পৌঁছাতে কয়েকবার রিকশা বদল করতে হচ্ছে। এ নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন কর্মজীবীরা।

নগরীর চেরাগি পাহাড়ে কথা হয় বারিক বিল্ডিংয়ের এক পোশাক কারখানার কর্মী সুমি আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, তাদের কারখানা থেকে কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়নি। শ্রমিকরা নিজস্ব উদ্যোগে এবং মালিকের কিছু সহায়তায় বাস ভাড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সকালে বাস আসেনি।

ঘাটফরহাদ বেগ এলাকার বাসিন্দা কর্ণফুলী ইপিজেডের একটি কারখানার কর্মী স্বপ্না দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদম ভোরে দু’য়েকটা টেম্পু-বাস চলাচল করেছে। রিকশায় করে প্রথমে নিউমার্কেট, এরপর আরেক রিকশায় আগ্রাবাদ মোড়ে গেছি। সেখান থেকে টেম্পুতে করে ইপিজেড গিয়েছি।’

সংবাদপত্র খোলার দিনে মীরসরাই থেকে নগরীতে আসেন সংবাদকর্মী বিশ্বজিৎ পাল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আসতে পেরেছি। গ্রামের ভেতর দিয়ে অটোরিকশায় করে এসে মেইন রাস্তায় উঠেছি। আবার আরেক গাড়িতে আর কিছুদূর। এভাবে ছয়টি গাড়ি বদল করে আসতে হয়েছে। শহরে ঢুকে দেখি রিকশা ছাড়া কিছু নেই। সিটি গেইট থেকে দুইবার রিকশা পাল্টে আন্দরকিল্লা এসেছি।’

নগরীর বিভিন্নস্থানে পুলিশের চেকপোস্ট ছিল। সেখানে প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস, বাস-মিনিবাস, মোটর সাইকেল দেখলে আটকানো হয়েছে। তবে কলকারখানা কিংবা জরুরি সার্ভিসে নিয়োজিত গাড়ি দেখলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথমদিনের চেয়ে জরিমানা কিংবা মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ কিছুটা শিথিল ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নগরীর মূল সড়কে লোকজনের উপস্থিতি কম থাকলেও এলাকায়, অলিগলিতে যথারীতি আড্ডা-জটলা ছিল। কাঁচাবাজারেও প্রচুর মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই ঘরে থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কম বলে জানিয়েছেন নগরীতে লকডাউন পরিস্থিতিতে অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটরা। এদিন জেলা প্রশাসনের ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) নববর্ষের বন্ধ এবং প্রথম রোজা থাকায় গাড়ি ও লোকজন কম বের হয়েছিল। আজ গাড়ি কিছুটা বেশি। লোকজনও বের হয়েছে। অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতা আছে। অনেকে মুখে মাস্কটাও ঠিকমতো লাগাচ্ছেন না। পৃথক ১০ অভিযানে মোট ৪২ মামলায় ৪১ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

এদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে ৩০০ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। শুক্রবার সকালে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে আরও বড় পরিসরে ত্রাণ বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।

এদিকে দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউনের মধ্যে বৃহস্পতিবার নগরীর বন্দর এলাকায় ১০ হাজার পরিবারকে ১৫ দিনের জন্য চাল-ডাল-তেল, ছোলাসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য বিতরণ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। বন্দর রিপাবলিক ক্লাবে মানবিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

এদিকে চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩৬৭ জন। তবে এদিন করোনায় মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে এ সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণের হার নমুনা শনাক্তের প্রায় ২৫ শতাংশ।

সারাবাংলা/আরডি/একে

চট্টগ্রাম টপ নিউজ রিকশা লকডাউন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর