পুলিশ চেকপোস্টে হয়রানির অভিযোগ নিয়ে যা বলছে ডিএমপি
১৬ এপ্রিল ২০২১ ০০:২১
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। এর আওতায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে বের হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর জরুরি প্রয়োজনে যেন মানুষ বের হতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে ‘মুভমেন্ট পাস’ চালু করেছে পুলিশ। অনলাইনে নিবন্ধন করে নিজের প্রয়োজন তুলে ধরে এই সেবার মাধ্যমে বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রথম দিন থেকেই এই ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তারা প্রকৃত অর্থে জরুরি প্রয়োজনে বের হলেও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আবার জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সরকারের বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকলেও তারা জরুরি সেবা দিতে বের হয়ে হয়রানির মুখে পড়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসা এসব অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ডিএমপি বলছে, করোনার বিস্তার রোধে একদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে চলেছেন পুলিশের সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি সেবাসহ জরুরি ও অত্যাবশকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং অতি জরুরি প্রয়োজনে নিয়োজিত ব্যক্তি বাদে বিনা কারণে বা উপযুক্ত পাস ছাড়া যেন কোনো ব্যক্তি রাস্তায় বের হতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করতেই ২৪ ঘণ্টা ডিএমপি সদস্যরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছেন।
ডিএমপি বলছে, ১৪ ও ১৫ এপ্রিল সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের কাজ অনেকটা সাফল্যের সঙ্গে করা গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিনা কারণে রাস্তায় বের হওয়া ব্যক্তি এবং জরুরি সেবায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য করাটা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়েছে। কেননা কিছু কিছু ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশকে সারাদিনই গলদঘর্ম হতে হয়েছে।
মুভমেন্ট পাস নিয়ে পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার হওয়ার কিছু ঘটনা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ঘটনার বিষয়ে ডিএমপি বলছে, কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু কিছু ব্যক্তি পুলিশের চেকপোস্টে বিড়ম্বনার শিকার হওয়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এরকম একটি ঘটনায় কাওরান বাজারে পুলিশ একটি প্রাইভেটকারের চালককে বাইরে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি গাড়িটি জনৈক চিকিৎসকের বলে দাবি করেন। কিন্তু চিকিৎসক গাড়ীতে উপস্থিত ছিলেন না। চালক ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়। কিন্তু গাড়ির কাগজপত্রের তথ্যের সঙ্গে চালকের বর্ণনা দেওয়া চিকিৎসকের সামঞ্জস্য না থাকায় চালকের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
জাহাঙ্গীর গেট এলাকার ঘটনাটি নিয়ে ডিএমপি বলছে, সেখানে একজন নাগরিক হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হলে কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণীসহ বেশ কয়েকটি চেকপোস্টের মুখোমুখি হন। এতে স্বাভাবিকভাবেই তার হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছিল। জাহাঙ্গীর গেট সংলগ্ন চেকপোস্টে তিনি ৩০ সেকেন্ডের মতো আটকে ছিলেন বলে জানান। যাতায়াতের সময় যারা আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদেরই যাচাই-বাছাই করা হয়েছে, যেটি চলমান বিধিনিষেধের পরিপ্রেক্ষিতে যৌক্তিক একটি বিষয়।
সরকারের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অপেশাদার আচরণের মুখে পড়লে নাগরিকদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি। সংস্থাটি বলছে, কোভিড মহামারির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ মেনে চলা নাগরিকদের দায়িত্ব। এসব বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ডিএমপি অঙ্গীকারাবদ্ধ। পুলিশের কাজে সার্বিক সহায়তা করতে নাগরিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। কোনো ব্যত্যয় দেখা গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর