‘লকডাউনে’ মিলছে না দুধের কাঙ্ক্ষিত দাম, ভালো নেই খামারিরা
১৬ এপ্রিল ২০২১ ০৮:২৯
সিরাজগঞ্জ: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে সরকারঘোষিত এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন। এ অবস্থায় দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলো সীমিত আকারে দুধ সংগ্রহ করায় বিপাকে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের হাজার হাজার খামারিরা। দেশের দুধের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলায় প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার উৎপাদিত দুধ কাঙ্খিত মূল্যে বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
এদিকে বিক্রি করতে না পারায় অনেকেই রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সংরক্ষণের অভাবে নষ্টও হচ্ছে হাজার হাজার লিটার দুধ। ছোট খামারিদের অনেকেই গরু বিক্রি করতে হাটে হাটে ঘুরছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারাখানা গড়ে ওঠে। এরপরই অঞ্চলটিতে হাজার হাজার গরুর খামার গড়ে ওঠে। সেখান থেকে মিল্কভিটা এখন প্রতিদিন ২ লাখ ২৫ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে। তরল দুধ, পাউডার দুধ, কনডেন্সড মিল্ক ও খাঁটি গাওয়া ঘি তৈরি করে দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করছে। বর্তমানে জেলায় ১৫ হাজার ৩৮০টি সমবায় ভিত্তিক গো-খামারের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ গবাদিপশু থেকে প্রতিদিন ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
খামারিরা জানান, গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ক্রমাগত বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। সেই তুলনায় বাড়েনি দুধের দাম। এছাড়া ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব হওয়ায় বেড়েছে গবাদি পশুর অসুখ। অনেকের গরু মারা গেছে সে অসুখে, আবার কারও গরু বিক্রি করে দিতে হয়েছে কম মূল্যে।
শাহজাদপুরে মিল্ক ভিটার পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকির জানান, দিনে যে দুধ উৎপাদন হয় তার মধ্যে জেলায় চাহিদা আট লাখ লিটার। উৎপাদিত দুধের একটা অংশ কেনে প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার, ঈগলু। তারা সবাই মিলে নেয় সাড়ে তিন লাখ লিটার। অবশিষ্ট ৯ লাখ লিটার দুধ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হোটেল ও মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করা হয়।
তিনি বলেন, গত ৯দিন ধরে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল না করায় নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার অনেকে দাম না পেয়ে রাস্তায় দুধ ফেলেও দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খামারিরা পথে বসবেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আমরা খামারিদের কথা ভেবে মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার, ঈগলু কোম্পানিদের বলেছি, এই সময়ে কোনোভাবেই দুধ কম নেওয়া যাবে না। সেইসঙ্গে খামারিদের উৎপাদিত অবশিষ্ট দুধ বাজারে সঠিকভাবে বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যে সকল খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারবে তারা এই ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুধ দেবে। এই গাড়ি প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা মনিটরিং করবে।
তিনি জানান, এভাবে দশদিন তারা ভ্রাম্যমাণ সেবা দেবেন খামারিদের। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/এসএসএ