প্রিপেইড মিটারে একবছরে গ্যাসের সিস্টেম লস কমেছে ৩ শতাংশের বেশি
১৬ এপ্রিল ২০২১ ১৬:২০
ঢাকা: প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের ফলে গ্যাসের সিস্টেম লসের পরিমাণ একবছরের ব্যবধানে ৩ শতাংশেরও বেশি কমে এসেছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (টিজিটিডিসিএল) তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্যাসের সিস্টেম লস ছিল ছিল ১০০৩ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ঘনফুট, অর্থাৎ ৫.৭১ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৩০৮ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট অর্থাৎ দুই শতাংশে। আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের ফলে। অর্থাৎ এই একবছরের ব্যবধানে সিস্টেম লস কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশে।
টিজিটিডিসিএল বলছে, প্রিপেইড মিটারের এই কার্যকারিতার জন্য আগের দুই লাখের সঙ্গে আরও ১ লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আরও দুইটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। সেসব প্রকল্পের কাঠামো দাঁড়ালে রাজধানীর আরও ১৩ লাখ গ্রাহক এই উদ্যোগের আওতায় আসবেন।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, গ্যাস চুরি ও অপচয় সর্বোপরি সিস্টেম লস কমাতে ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। ‘প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৫ সালে চুক্তি সই করে জ্বালানি বিভাগ। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তিতাস। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে ২ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৭১২ কোটি টাকা। পরে অবশ্য এই ব্যয় সংশোধন করে ৪৯৮ কোটি টাকা করা হয়। কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সেই ব্যয় ৭৩৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে।
এই প্রকল্পের সম্প্রসারণ করে দ্বিতীয় ধাপে প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে ৩৫৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। নতুন করে প্রকল্পের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। আর নতুন করে স্থাপন করা হচ্ছে আরও ১ লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার। রাজধানীর ৩৪টি এলাকার সঙ্গে আরও সাতটি এলাকা বংশাল, গেন্ডারিয়া, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ, নিউমার্কেট ও শাহাবাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে এসব এলাকার তিতাসের গ্রাহকরাও এবারের প্রকল্প সুবিধার আওতায় আসবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহারে আগ্রহী, তাদের আঙিনায় স্থাপন করা হচ্ছে। আর গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনে গ্রাহকের কোনো খরচ নেই। প্রতিমাসে গ্যাস বিলের সঙ্গে ৬০ টাকা চার্জ যুক্ত করে মিটারের বিল কেটে নেওয়া হবে। মিটার স্থাপনের পর থেকে আগামী ২০ বছর এ টাকা কাটবে সংস্থাটি। যারা এখনই এই প্রিপেইড মিটার নিতে আগ্রহী নন, তারা পরেও এই মিটার স্থাপনের সুযোগ পাবেন বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, শেষে নেওয়া ১ লাখ ২০ হাজার মিটারের মধ্যে ৫০ হাজার মিটার আগামী জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য সেই লক্ষ্য পূরণ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এই শঙ্কা অতিক্রম করেই লক্ষ্য পূরণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে এ উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের ফলে গ্যাসের সিস্টেম লসও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসছে। তাই পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে প্রিপেইড মিটারের পরিধি বাড়ানো নিয়ে কাজ চলছে।
এদিকে, গ্যাস সরবরাহকারী তিতাসের তথ্য অনুযায়ী, তাদের বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ২৮ লাখ ৫৫ হাজার। এরই মধ্যে দুই লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পেয়েছেন। এই প্রকল্প ছাড়াও মিটার স্থাপনে আরও দু’টি বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। দুইটি প্রকল্পের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ মিটার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। আরও সাড়ে পাঁচ লাখ মিটার স্থাপনের আরেকটি প্রকল্পও রয়েছে আলোচনায়।
সারাবাংলা/জেআর/এএম