ভুয়া মেসেঞ্জার আইডি খুলে বেরোবির শিক্ষিকাকে ফাঁসানোর অভিযোগ
১৭ এপ্রিল ২০২১ ১১:১১
ফেসবুক মেসেঞ্জারের ভুয়া প্রোফাইল ও নোটিশ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জরিপের নামে টাকা তুলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষিকাকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে ওই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নেতার ‘পরোক্ষ নির্দেশে’ এমনটা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম তাবিউর রহমান প্রধান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আর অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর নাম আবদুল্লাহ আল তুফায়েল। তিনি ওই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনীম হুমাইদা এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামালের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে, ওই শিক্ষক নেতার পরোক্ষ ‘নির্দেশে’ প্ররোচিত হয়ে বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তুফায়েল আরেক শিক্ষার্থীকে এ অপরাধ করতে চাপ প্রয়োগ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তি উদ্ধৃত করেছেন শিক্ষিকা তাসনীম হুমায়দা।
এ ঘটনায় পেশাগত ও ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করে বিষয়টি তদন্তপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদনও করেন তাসনীম হুমাইদা।
তাসনীম হুমাইদার লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল দুপুর ১টা ২৯ মিনিটে বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ক্লাস প্রতিনিধি ফেসবুকের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাসনীম হুমাইদাকে জানায়, সে তাদের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছে কোনো একটা সার্ভের কাজের জন্য প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে দিতে বলেছেন। এজন্য অপর একজন ক্লাস প্রতিনিধি তাদের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ১৫ জনের নিকট থেকে ১০০ টাকা করে তুলেছে। পরে ওই শিক্ষার্থীর পুরো বক্তব্য শোনেন শিক্ষিকা তাসনীম হুমায়দা।
ওই বিভাগের যে শিক্ষার্থী ভুয়া আইডি দিয়ে কাজটি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন তাকে উদ্ধৃত করে ওই অভিযোগত্রে বলা হয়, ‘বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (৫ম ব্যাচ) আব্দুল্লাহ আল তুফায়েল নামক ওই শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানের ‘ভোকাল’ হিসেবেই কাজ করে এবং মূলত এই কাজটি করার নির্দেশনা পরোক্ষভাবে স্যারের (তাবিউর রহমান প্রধান) কাছে থেকেই আসে। কাজটি করলে সেই নারী শিক্ষার্থী পরবর্তীতে শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধানের কোর্সে ভালো মার্কস পাবে, ভালো রেজাল্ট হবে, এ ধরনের কথা বলে তোফায়েল তাকে প্রলুব্ধ করে ও চাপ প্রয়োগ করে।’
অভিযোগে বলা হয়, তাসনীম হুমাইদার ফেসবুকের প্রোফাইলের ছবি ব্যবহার করে হুবহু তার আইডির মত করে তার আইডির সঙ্গে মেসেঞ্জারে জরিপের নামে টাকা চাওয়ার ভুয়া কথোপকথনটি তৈরি করা হয়।
তাসনীম হুমায়দা বলেন, ‘আমি সেই শিক্ষার্থীর পুরো বক্তব্য শুনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং আমার বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস অনুভব করি। আমি মনে করি যে এই ঘটনার মাধ্যমে আমাকে সামাজিকভাবে, পেশাগতভাবে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও ক্ষতি করা হয়েছে। আমাকে মারাত্মক কোনো বিপদের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর আমি ডিজিটালি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
আইনের আশ্রয় নিবেন কিনা জানতে চাইলে তাসনীম হুমাইদা বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে ও নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন। যদি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার না পান। তাহলে বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।
এদিকে তাসনীম হুমাইদার নামে ভুয়া মেসেঞ্জার আইডি খুলে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টায় তদন্তপূর্বক সংশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৃহৎ সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) রাতে সংগঠনের আহবায়ক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে জাতীয় পতাকা অবমাননা ও বিকৃতির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করায় শিক্ষক নেতা তাবিউর রহমান প্রধানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। এই ঘটনায় শিক্ষিকা তাসনীম হুমায়দা পতাকা অবমামনাকারীদের বিরুদ্ধে জোরাল অবস্থান নিয়েছিলেন।
শিক্ষকের নামে ভুয়া মেসেঞ্জার আইডি তৈরি করে ফাঁসানোর বিষয়ে জাতীয় পতাকা অবমানার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী ও ওই বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, ‘পতাকা মামলার দু’জন আসামি রয়েছে সাংবাদিকতা বিভাগে। তাসনীম হুমায়দা পতাকা অবমানার বিপক্ষে জোরাল অবস্থান নিয়েছেন। তাই তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে হবে। মামলা থাকলে বরখাস্ত করার বিধান আছে, কিন্তু তারা বহাল তবিয়তে আছে। তাদেরকে বরখাস্ত না করলে ওই বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কেউ নিরাপদ নয়।
ভুয়া ম্যাসেঞ্জার তৈরির বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল তোফায়েল বলেন, ‘যে শিক্ষক এই অভিযোগ করেছেন, মূলত এটা তার নোংরা রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, ‘২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের যে ব্যাচের শিক্ষার্থীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে। সেই ব্যাচের একটিও ক্লাস তিনি না নিয়েই ফাইনাল পরীক্ষা শুরু করেছেন। ওই ঘটনাকে ঢাকার জন্য মূলত তিনি আমাকে জড়িয়ে এটা করেছেন। এটা পুরোটাই একটা বিশাল ষড়যন্ত্রের অংশ।’
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল, প্রো-ভিসি সরিফা সালোয়া ডিনা ও ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউই ফোন রিসিভ করেনি।
সারাবাংলা/এনএস
ফেসবুক মেসেঞ্জারের ভুয়া প্রোফাইল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকাকে ফাঁসানোর অভিযোগ