ঘরের বাইরে অকারণ আনাগোনা বেশি, সামলাতে হিমশিম পুলিশ
১৭ এপ্রিল ২০২১ ১৭:০৫
ঢাকা: করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় বছরের দ্বিতীয় দফায় ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুলিশকে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এমনকি অযথাই ঘরের বাইরে বেরোনো মানুষ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় জনগণ নিজে থেকে সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে; আর সেটি সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে না বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা।
পুলিশ বলছে, যতটা না কাজের লোক বাইরে বেরোয় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক বের হয় অযথাই। তারা এমন কাজের অযুহাত দেখান যে, সেটি দুদিন পরে করলেও চলতো। আবার বাইরে বের হওয়ার জন্য ন্যূনতম কোনো প্রটেকশন রাখেন না অনেকে। এই লোকগুলোকে আমরা প্রত্যাশা করি না। এইসব অপ্রত্যাশিত লোকজনের জন্য পুলিশ আজ হিমশিম খাচ্ছে। সরকারি বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে পালন করাতে পারছি না।
মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, শুধু অপ্রত্যাশিত লোকজনই নন, তার সঙ্গে অপ্রত্যাশিত হাজার হাজার গাড়িও রয়েছে। একটা সমাধান করতে না করতেই পেছনে যানজটের সৃষ্টি হয়ে যায়। এতে আরও বড় সমস্যা তৈরি হয়।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) শনির আখড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ পরিদর্শক আফজাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারে লকডাউন ঢাকার বাইরে ভালোভাবে পালন হচ্ছে। তবে ঢাকাতেও আরও ভালোভাবে পালন করা সম্ভব ছিল, যদি জনগণ সহযোগিতা করতো। ঢাকায় সহযোগিতা তো পরের কথা কীভাবে পুলিশকে বিপদে ফেলা যায় সেই চেষ্টা করেন।’
কী রকম বিপদ?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারও গাড়ির কাগজ নেই বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই মর্মে মামলা দিলে তিনি উল্টো ফেসবুকে লিখে বসেন, কেন তাকে মামলা দিয়েছি। তিনি ডাক্তার হোক, পেশাজীবী হোক আর মোটরসাইকেল চালক হোক। আইন ভঙ্গের কারণেই তো মামলা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু স্ট্যাটাসে মানুষ সঠিক বিষয়টি জানতে পারল না। তারা জানলেন, ওই ডাক্তার বা পেশাজীবীকে মামলা দিয়ে পুলিশ হয়রানি করেছে।’
অপ্রত্যাশিত লোক কারা জানতে চাইলে মানিকনগর চেকপোস্টে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম রব্বানী বলেন, ‘লকডাউনে এত লোক ঘরের বাইরে বের হয় জানা ছিল না। আমরা মাত্র ছয় জন পুলিশ সদস্য ছিলাম। সড়কে লোক তখন প্রায় একশর মতো। বাধ্য হয়ে দ্রুত ছেড়ে দিতে হলো সবাইকে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ বাজারে যাবেন, কেউ মুগদা হাসপাতালে, কেউ আত্মীয়কে দেখতে, কেউ বন্ধুর বাসায়, আবার কেউ ঘুরতে বের হয়েছেন। তবে আমরা ঘুরতে বের হওয়া বেশ কয়েকজনকে ফেরত পাঠিয়েছি। এদের বেশিরভাগেরই মুভমেন্ট পাস ছিল না।’
গোলাম রব্বানী আরও বলেন, ‘গার্মেন্টসসহ অন্যান্য কারখানায় কর্মরতদের নিজস্ব পরিবহনে নেওয়ার কথা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এটি মানুষকে আরও বিপাকে ফেলেছে। তাদের জন্য আমরাও বিপদে আছি। এরকম লকডাউন হলে সামনে সবার বিপদ আসন্ন।’
গাবতলী এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের উপ পরিদর্শক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এরকম লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুলিশ এবারও আক্রান্ত হবে। তবে আগের চেয়ে এবার বেশি আকারে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। লকডাউনে এত লোক কীভাবে ঘরের বাইরে থাকে বুঝতে পারছি না। এখনও অনেক লোক করোনা বিশ্বাস করেন না, স্বাস্থ্য বিধি মানেন না, মুখে মাস্ক পড়েন না। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতনদের আরও বেশি ভাবা দরকার।’
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘ঢাকা শহরে আমরা সর্বাত্বকভাবে সরকারি বিধিনিষেধ পালনে কাজ করছি। মহাসড়ক মোটামুটি ফাঁকা থাকলেও বেশ কিছু এলাকায় লোকজনের জটলা তৈরি হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। আমরা চাই পুলিশ যাতে আক্রান্ত কম হয়- এমন স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে জনগণকে বিধিনিষেধ পালনে উৎসাহ দেওয়া। পুলিশ আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন কে সেবা দেবে?’
তিনি বলেন, ‘জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবাইকে একটা কথা মানতে হবে যে, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন মানে আপনি আপনার পরিবারকে সুরক্ষা দিচ্ছেন। সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করছেন। মনে রাখবেন মাত্র গুটি কয়েক মানুষের উদাসীনতার জন্য আজ করোনা আমাদের ওপর জেঁকে বসেছে। এই বিপদ থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এর জন্য বর্তমানে প্রথম শর্ত হলো- ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম