বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি, মূল্য পুনর্বিবেচনার আবেদন
১৮ এপ্রিল ২০২১ ১৫:০৪
ঢাকা: এতদিন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করতেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানি করে প্রথম এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু বিইআরসির নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করছেন তারা। এলাকা ও কোম্পানিভেদে বেসরকারি পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৯৭৫ টাকা বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৪শ টাকা পর্যন্ত।
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন, তাদের উৎপাদন খরচ না রেখেই দাম নির্ধারণ করছে সরকার। নির্ধারিত দামে বিক্রি করলে লোকসান গুণতে হবে। তাই দাম পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসিতে চিঠি দিয়েছেন তারা।
গত ১২ এপ্রিল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ৫৯১ টাকা এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার ৯৭৫ টাকা ও ৪৫ কেজির সিলিন্ডার ৩ হাজার ৬৫৯ টাকা। নতুন দাম ঘোষণা করে ওইদিন থেকেই বাজারে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো ভোক্তা সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি কিনতে পারছেন না।
এলপিজির দাম যাচাই করতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের খুচরা বাজারে খোঁজ নেওয়া হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করার খবর পাওয়া যায়নি। এলাকাভেদে সিলিন্ডার প্রতি ৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার রহিমা এন্টারপ্রাইজের শরিফুল আলম জানান, যে দামে কিনতে হচ্ছে সে অনুযায়ী মুনাফা রেখেই খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। যে সিলিন্ডার বেশি দামে কেনা সেগুলো বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। একই কথা বলেছেন শেওড়াপাড়া এলাকার মিতালী স্টোরের ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান।
নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে দেখা যায়নি রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাটখোলা, যাত্রাবাড়ি, মানিকনগর ও মুগদা এলাকায়। উত্তরার কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, তারাও ৯৭৫ টাকা প্রতি সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারছেন না। তবে দেখা যায়নি সরকারি গ্যাসের সিলিন্ডার।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে এলাকা ও কোম্পানি ভেদে ৯৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। হালি শহরের কয়েকটি দোকান থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী ১২ কেজির টোটাল গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা। বসুন্ধরা ও ওমেরা ১০৫০ টাকা। সরকারি পদ্মা, মেঘনা, যমুনাও বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা ৯৫০ টাকা এলাকা ভেদে। বরিশালে বসুন্ধরা, ওমেরা, বেক্সিমকো, নাভানা, পদ্মা ৯৫০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। ভোলা শহরে গড়ে ১০০০ টাকা থেকে ১১৫০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
খুলনায় প্রতি সিলিন্ডার ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। শেরপুরে ১০০০ টাকা প্রতি সিলিন্ডার, টাঙ্গাইলে ৯৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। রাজশাহীতে প্রতি সিলিন্ডার ১০০০ টাকা, জামালপুরের ১১০০ টাকা। ময়মনসিংহের শিববাড়ীতে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। নেত্রকোনায় ৯৫০। অথচ সরকারি কোম্পানি’র প্রতি সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম হওয়ার কথা ৫৯১ টাকা আর বেসরকারি ১২ কেজির দাম হওয়ার কথা ৯৭৫ টাকা।
এ প্রসঙ্গে এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওমেরার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিইআরসি এলপিজির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে পারেনি। উৎপাদন পর্যায়ে সিলিন্ডার প্রতি খরচ কম ধরা হয়েছে। আমরা পরিবেশকের কাছে সিলিন্ডার পৌঁছে দেই। সে খরচ ধরা হয়নি। সর্বোপরি উৎপাদনকারী কোম্পানির কোনো মুনাফায় রাখা হয়নি। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে গেলে লোকসান গুণতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত দাম পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।’
বাজারে দেখা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনা কোম্পানির গ্যাসের দামও বেশি। ঢাকার বাইরে তো সিলিন্ডার পাওয়াই যাচ্ছে না। যেসব জায়গায় পাওয়া গেছে সেসব স্থানেও সিলিন্ডার প্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক জানান, তারা মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন। তবে এমন কোনো অভিযোগ তারা পাননি।
এ বিষয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের এক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলপিজির যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেশি দাম রাখার যুক্তি নেই। তবে ব্যবসায়ীরা যে চিঠি দিয়েছে সে প্রসঙ্গে বলেন, তাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে তবে তা পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে।’
উল্লেখ্য, এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে আদালতের নির্দেশসহ নানামুখী চাপের মুখে গত ১৪ জানুয়ারি এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। ওই শুনানিতে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণের সুপারিশ করে এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি।
সারাবাংলা/জেআর/এএম