করোনায় বেড়েছে মানসিক সমস্যা, ১ বছরে আত্মহত্যা ১৪ হাজার
১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৮
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
প্রতিষ্ঠানটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৮ সালে দেশে মানসিক রোগের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু করোনাকালে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় ৪৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা ও ৩৩ শতাংশের মধ্যে দুশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে। গত এক বছরে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৪ হাজার, আগের আগের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। কোভিড নিয়ে কুসংস্কার, স্টিগমা ও কোভিড ভীতিতে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে পাঁচটি।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে আইইডিসিআর এসব তথ্য তুলে ধরেছে। মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত মানসিক রোগের হার সংক্রান্ত জরিপের ফলাফলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক মহামারি পরিবর্তন করেছে মানুষের মনোজগৎ, তা আমরা আঁচ করতে পারি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত মানসিক রোগের হার সংক্রান্ত জরিপের ফলাফলে। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ও দুশ্চিন্তা ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষের মধ্যে। সেখানে কোভিডকালে বাংলাদেশে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতা ও ৩৩ শতাংশের দুশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সাধারণ সময়ের চেয়ে কোভিডকালে মানসিক সমস্যা বাংলাদেশেও বেড়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত একবছরে বাংলাদেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৪ হাজার। এই সংখ্যা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি। সুনির্দিষ্টভাবে কোভিড নিয়ে কুসংস্কার, স্টিগমা, কোভিড ভীতিতে পাঁচ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বেকারত্বের মতো কারণে বাড়ছে মানসিক সংকট।
করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত সব পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
কোভিড –১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয়
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। মানসিক চাপ কমাতে হ্রাস করতে হবে। এ জন্য ঘুমানোর স্বাভাবিক সময় ঠিক রাখতে হবে, নিজের পছন্দের বিষয় ও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে, পরিবারের সঙ্গে গুণগত সময় কাটাতে (পরস্পরকে উৎসাহ দেওয়া, পরস্পরের কাজে সহযোগিতা করা, ঘরের মধ্যেই একসঙ্গে সময় কাটানো ও পছন্দের কাজ করা)।
এছাড়া প্রতিদিন কিছু সময় অবশ্যই শরীর চর্চা করা, নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ঘরেই প্রার্থনা করা ও সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত আতঙ্ক, অস্থিরতা, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, ঘুমের ধরন পরিবর্তন ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা গেলে কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যাবে। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে কল করা যাবে জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩-১ বা বাতায়ন ১৬২৬৩ নম্বরে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর