Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬,৮১১ জনের সুস্থ হওয়ার রেকর্ড

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ এপ্রিল ২০২১ ২৩:০৬

ঢাকা: দেশে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ জনের মাঝে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মাঝে ৬ লাখ ২৮ হাজার ১১১ জন এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ সংক্রমণমুক্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে দেশে সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৮১১ জন। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্তের পরে ২৪ ঘণ্টায় এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার রেকর্ড।

এর আগে ২০২০ সালের ১৫ হাজার ২৯৭ জনের সুস্থ হওয়ার তথ্য জানানো হলেও সেটি ছিল কয়েকদিনের পরিসংখ্যান। দেশে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৮৮ জন মারা গেলেও সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৩১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ মঙ্গলবারের (২০ এপ্রিল) তথ্য বলছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪ হাজার ৫৫৯ জনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ২৭ হাজার ৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করে এই সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯১ জন মারা গেছেন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে।

২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থতার পরিসংখ্যান

দেশে ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের লক্ষ্যে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর ৮ মার্চ প্রথম জানা যায় দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির উপস্থিতি রয়েছে। ওইদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, ইতালি ফেরত দুজন এবং তাদের একজনের পরিবারের আরেক সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

১১ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া তিনজনের মাঝে দুইজনের নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া যায়।

১৩ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া একজন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠানো হয়। মূলত এটিই ছিল দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার তথ্য। পরবর্তীতে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে বাড়তে থাকে সুস্থতার হারও। ২০২১ সালে মার্চ মাস থেকে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসে এসে দেশের সব ধরনের রেকর্ড ছাড়ায়। সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়ালেও এই মাসে দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক সুস্থতার পরিসংখ্যানও দেখা যায়।

২০ এপ্রিল, ২০২১: এ দিন দেশে ৬ হাজার ৮১১ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

১৯ এপ্রিল, ২০২১: এ দিন দেশে ১১২ জন ব্যক্তি কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মারা গেলেও ৬ হাজার ৩৬৪ জন সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

১৮ এপ্রিল, ২০২১: এ দিন দেশে ৬ হাজার ১২১ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

১৫ এপ্রিল, ২০২১: এ দিন দেশে ৫ হাজার ৯১৫ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে চতুর্থ সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

১৭ এপ্রিল, ২০২১: এ দিন দেশে ৫ হাজার ৯০৭ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে পঞ্চম সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

১৬ এপ্রিল, ২০২১: এ দিন দেশে ৫ হাজার ৬৯৪ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

১২ জুলাই, ২০২০: এ দিন দেশে ৫ হাজার ৫৮০ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে সপ্তম সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান। ২০২০ সালের ১৫ জুনের সম্মিলিত হিসেব বাদ দিলে ১২ জুলাইয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী সংক্রমণ মুক্ত হয়ে ওঠে।

১৪ এপ্রিল, ২০২১: এ দিন দেশে ৫ হাজার ৩৩৩ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে অষ্টম সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

১৪ জুলাই, ২০২০: এ দিন দেশে ৪ হাজার ৯১০ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে নবম সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

১৩ এপ্রিল, ২০২১: এ দিন দেশে ৪ হাজার ৮৫৩ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। যা একদিনে দশম সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর সুস্থতার পরিসংখ্যান।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সর্বমোট সুস্থতার পরিসংখ্যান

দেশে ২০২০ সালের ১৪ জুলাই কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থতার সংখ্যা এক লাখে পৌঁছায়। অর্থাৎ কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে প্রথম একজন সুস্থ হওয়ার ১২৩ দিন পরে সুস্থতার সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থতার সংখ্যা দুই লাখে পৌঁছায় ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট। সুস্থতার সংখ্যা এক লাখ থেকে দুই লাখ পর্যন্ত ছাড়ায় মাত্র ৪৭ দিন সময়ের ব্যবধানে।

২০২০ সালের ৩০ আগস্টের ৪৭ দিন পরে ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থতার সংখ্যা ছাড়ায় ৩ লাখ।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা চার লাখ ছাড়ায় ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর। সংক্রমণ থেকে সুস্থতার সংখ্যা তিন লাখ থেকে চার লাখ ছাড়াতে সময় নেয় ৫৩ দিন।

২০২১ সালের ৪ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থতার সংখ্যা ছাড়ায় পাঁচ লাখ। সংক্রমণ থেকে সুস্থতার সংখ্যা চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ ছাড়াতে সময় নেয় ৮৬ দিন।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল সংক্রমণ থেকে সুস্থতার সংখ্যা ছাড়ায় ছয় লাখ। অর্থাৎ সংক্রমণ থেকে সুস্থতার সংখ্যা পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ ছাড়াতে সময় লেগেছে ৪৩ দিন।

এই এপ্রিল মাসের ২০ দিনেই দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুহারও। তবে এই সময়েই দেশে বেড়েছে সুস্থতার সংখ্যাও। দেশে বর্তমানে মোট সংক্রমণ শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ হলেও সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। দেশে বর্তমানে মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৫ শতাংশ।

মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে যা করণীয়

দেশে ২০২১ সালের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে দ্রুতগতিতে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস অর্থাৎ কোমর্বিডিটি আছে তাদের যদি দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আনা যায় তবে মৃত্যুহার আরও কমে আসবে। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, যেন সংক্রমণের হারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়বেই। আর তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। সংক্রমণের উৎস ও উৎপত্তিস্থল বিশ্লেষণ করে তারপর সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

তিনি বলেন, দেশে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সবারই কিন্তু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে না। তবে যদি সঠিক সময়ে নমুনা পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যায় তখন মৃত্যুহার আরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। আর এক্ষেত্রে বাড়াতে হবে নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা। আমাদের কিন্তু এখন সেটার সক্ষমতা আছে। একইসঙ্গে আমাদের দেশে অ্যান্টিজেন টেস্টও চলছে, যেখানে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মাঝে ফলাফল পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, মানুষকে নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনার পাশাপাশি যদি আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা যায় তবে সুস্থতার হার বাড়বে আরও। কারণ অনেকের পক্ষেই কিন্তু বাসায় আইসোলেশন সম্ভব না। সেক্ষেত্রে যদি সংক্রমণ শনাক্তের পাশাপাশি সঠিক সময়ে আইসোলেশনে নেওয়া যায়। তবে মৃত্যুঝুঁকি কমে আসবে অনেকখানি।

দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণটা ঝুঁকিপূর্ণ বেশি তাদের জন্য যাদের কোমর্বিডিটি আছে। তাদেরকে সংক্রমণ শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গেই যদি চিকিৎসার আওতায় আনা যায় তবে সুস্থতার হার বাড়বে। তবে সবার আগে দেশে সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো মানুষের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা। নইলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কমানো কঠিন। করোনাভাইরাসের সমস্যাটি এমন, প্রতিরোধ করেই একে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা না পারলে পরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। এখনও যদি আমরা এই বার্তাটি না বুঝি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি, তাহলে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, ‘সবাই যদি মাস্ক পরে, সবাই যদি অন্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো ঠিকমতো মেনে চলে, তাহলেই কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব ৯০ শতাংশের বেশি। ফলে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে, না ধুয়ে চোখে-নাকে-মুখে হাত দেওয়া যাবে না, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। সবাই এগুলো অনুসরণ করলে পরিস্থিতি এমনিতেই নিয়ন্ত্রণে আসবে।

সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ

করোনা সুস্থতার হার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর