সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পৌরসভার ময়লার ভাগাড়, জীববৈচিত্র্য হুমকিতে
২১ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৪০
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যত্রতত্রভাবে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনাঞ্চল, পাশাপাশি চরম দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ। শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য ফেলার এমন অভিযোগ খোদ মৌলভীবাজার পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বর্জ্য ফেলে পরিবেশকে হুমকিতে না ফেলার জন্য সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানায় বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। তবে চিঠি পাওয়ার পরও কোনো প্রতিকার হয়নি। দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে বন ও বন্যপ্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট পরিবেশ কর্মীরা।
বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং মৌলভীবাজার পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল থেকে মৌলভীবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ জেলার স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় বনের ঢালু অংশে আবর্জনা ফেলা শুরু করে। এমনকি বর্জ্য পরিবহনের জন্য বনাঞ্চলের ভেতর দিয়েই সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। বিষয়টি বন বিভাগের নজরে এলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরীসহ অন্য কর্মকর্তারা বর্জ্য ফেলার স্থানটি পরিদর্শন করে পৌর মেয়রের কাছে এ বিষয়ে মৌখিক ও লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানান।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ময়লা ফেলার স্থানটি বন্যপ্রাণীর বিচরণ এলাকা। বনের জায়গায় শহরের বর্জ্য ফেলার কারণে এখানকার পরিবেশ দূষিত হবে। এসব বর্জ্য খেয়ে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হতে পারে। একইসঙ্গে এখানে ফেলা অপচনশীল প্লাস্টিক স্থায়ীভাবে বনের পরিবেশের ক্ষতি করবে। এছাড়া দুর্গন্ধে আশপাশের এলাকার মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে।
সরেজমিনে স্থানটি পরিদর্শন করে বনবিভাগের চিঠিতে উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। জেলার স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বনের সংরক্ষিত অংশে ময়লা-আবর্জনা ও বোতলজাত প্লাস্টিকসহ সব ধরনের বর্জ্য ফেলছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এসব বর্জ্য আবার আগুন দিয়ে পোড়ানোও হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার জন্য ওই এলাকায় বেড়েছে মশা-মাছির উপদ্রব। বনের ভেতর ময়লা পরিবহনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক, ময়লা পানি নিষ্কাশনের জন্য খোঁড়া হচ্ছে নালা।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের আপত্তি সত্ত্বেও পৌর কর্তৃপক্ষ জোর করে ময়লা ফেলছে এবং সড়ক নির্মাণের কাজও অব্যাহত রেখেছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। পরবর্তী সময়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে তারা নির্দেশনা দেবেন।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আবর্জনা ফেলার এ বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ কর্মীরাও। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুল করিম কিম জানান, কোনো অবস্থাতেই সংরক্ষিত বনের জায়গায় ময়লা ফেলে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীদের জীবন সংকটে ফেলতে পারেন না পৌর কর্তৃপক্ষ। এটা সুনির্দিষ্টভাবে পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন তারা। পৌরসভার মত একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের এমন কাজ মেনে নেওয়া যায় না, এটা চরম দুঃখজনক কাজ। এটি বন্ধ না হলে অচিরেই আন্দোলনে নামবেন বলে জানান আব্দুল করিম কিম।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ এতদিন শহরের বাইরে জগন্নাথপুর এলাকায় পৌরসভার নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলে আসছিল। বর্তমানে সেখানে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই স্থানে আপাতত ময়লা ফেলা হচ্ছে। ডাম্পিং স্টেশনের কাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানেই ময়লা ফেলতে হবে।
প্রসঙ্গত, মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে প্রাকৃতিক বনে গড়ে তোলা হয়েছে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক। বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ২০০৬ সালের জুলাইয়ে সংরক্ষিত এ বনভূমিকে ইকোপার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৮৮৭ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা মিশ্র-চিরহরিৎ এ প্রাকৃতিক বনটিকে ১৯১৬ সালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল (রিজার্ভ ফরেস্ট) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরিবেশবিদদের আপত্তিকে এবং দাবিকে তোয়াক্কা না করে বনবিভাগের উদ্যোগে বর্তমানে এ বনে সাফারি পার্ক চালু করার বিষয়েও আলোচনা চলছে বলেও জানান পরিবেশবিদরা।
সারাবাংলা/এনএস