Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজবাড়ীতে কথা কাটাকাটির জেরে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ এপ্রিল ২০২১ ১৮:৫৪

রাজবাড়ী: সেহেরিতে দুধের সর খাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে সুরাইয়া সুলতানা তমিসরা (২৪) নামে এক গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) ভোর রাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের চর শ্যামনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

তমিসরা রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামের দেওয়ান মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তার তাইবা নামে চার বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

এ ঘটনায় বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ওই গৃহবধূর বড় ভাই দেওয়ান মো. সৌরভ।

মামলার আসামিরা হলেন তমিসরার স্বামী মশিউর রহমান মিটুল (৩৮), দেবর নাইম মন্ডল (৩০), জা সাদিয়া বেগম (২৫), ভাসুর হাতেম মন্ডল (৪৫) ও শাশুড়ি সাহেরা বেগমসহ (৬৫) অজ্ঞাতনামা তিন-চার জন।

এ ব্যাপারে দেওয়ান মো. সৌরভ সারাবাংলাকে জানান, ২০১৪ সালে চর শ্যামনগর গ্রামের সাহা মন্ডলের ছেলে মশিউর রহমান মিটুলের সঙ্গে তার বোন সুরাইয়া সুলতানা তমিসরার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মিটুল ও তার মা এবং ভাই-ভাবীরা যেকোনো সামান্য বিষয় নিয়ে তার বোনের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। বিষয়গুলো তার বোন বাড়িতে এসে তাদের কাছে বলতেন। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা সুরাইয়াকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিতেন।

সৌরভ জানান, মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে মিটুল তার বাবার কাছে ফোন করে জানান, তার বোন নাকি আত্মহত্যা করেছেন। তারা দ্রুত মিটুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, সুরাইয়ার মরদেহ বারান্দায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার গলায় ফাঁস নেওয়ার কোনো চিহ্ন নেই। তার থুতনিতে, নাকে, ঘাড়ে ও হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানান সৌরভ।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, সোমবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সেহেরিতে দুধের সর খাওয়া নিয়ে আমার বোনের সঙ্গে তার শাশুড়ি সাহেরা বেগমের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির বিষয়টি সাহেরা বেগম তার ছেলে মিটুল, নাইম, হাতেম ও ছেলের বউ সাদিয়াসহ পরিবারের অন্য লোকদের জানান। এক পর্যায়ে তারা সবাই মিলে আমার বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

সৌরভের অভিযোগ, মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) ভোরে তার বোনের ওপর পাশবিক শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন দিকে নেওয়ার জন্য ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার কথা প্রচার করা হয়।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার জানান, মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সে সময় গৃহবধূ তমিসরার স্বামী মিটুল ও শ্বাশুড়ি সাহেরা বেগমসহ পরিবারের লোকজন জানান, তমিসরা গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

তবে পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে তমিসরার শরীরে আত্মহত্যার কোনো আলামত দেখতে পায়নি বলে জানান ওসি স্বপন কুমার। তিনি বলেন, বরং তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এরপর আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তমিসরাকে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণেই তমিসরার স্বামী মিটুল, জা সাদিয়া, ভাসুর হাতেম ও শ্বাশুড়ি সাহেরা বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।

ওসি আরও জানান, গৃহবধূ তমিসরার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আগে থেকেই থানা হাজতে আটক মিটুল, সাদিয়া, হাতেম ও সাহেরাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে। মামলার এজাহার নামীয় পলাতক আসামি নাইমসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি স্বপন কুমার মজুমদার।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/একেএম

গৃহবধূ রাজবাড়ি হত্যা মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর