৪৬টি বাড়ি বালুর নিচে, মাথাব্যথা নেই কারো
২২ এপ্রিল ২০২১ ১২:০৪
কুষ্টিয়া: গড়াই নদী খনন প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের বালুতে চাপা পড়েছে ৪৬টি পরিবার। ১৩ এপ্রিল আকস্মিক এই ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। জমিটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের, কিন্তু পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এই অমানবিক কাজে বিপাকে পড়ে আকাশের নিচে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। অথচ এই ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথাই নেই। দায়সারা কথা বলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। জনপ্রতিনিধিরাও তাকিয়ে আছেন সরকারি দফতরের দিকে। উল্টো ড্রেজিং ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে ড্রেজিং পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে।
কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বাড়িঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি- পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অসতর্কতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। বহলা গোবিন্দপুর গ্রামে এখানে প্রায় ৬০ বছর ধরে বসবাস করেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, কমপক্ষে ৪৬টি কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ির চালা পর্যন্ত বালুর নিচে চলে গেছে। চাপা পড়েছে প্রায় ৫০টি টিউবওয়েল। এখন খাবার পানি কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে আনতে হচ্ছে। বাসায় খাবার নেই, রোজাও করতে পারছি না। কোনো সহায়তাও পাইনি।
চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হাসান রিন্টু বলেন, রাতের আঁধারে বালু ফেলে এই অবস্থা করা হয়েছে। এরপর আমি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারপরও বালুর উচ্চতা তারা বাড়িয়েই গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং শাখা) তাজমীর হোসেন জানান, ২০১৮ সালে ৬২৯ কোটি টাকায় তথা সুন্দরবন এলাকায় মিঠা পানির সরবরাহ বাড়াতে কুষ্টিয়ায় গড়াই নদী খনন চলছে। এই লক্ষ্যে গড়াই নদীতে সাতটি সিএসডি ড্রেজার কাজ করছে।
ঘরবাড়ি বালুচাপার ব্যাপারে এই প্রকল্পের পিডি মনিরুজ্জামান বলেন, স্থানীয়ভাবে বিষয়টি ফয়সালা করা হয়েছে। স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির তত্বাবধানে এখন বালু ফেলা হচ্ছে, যাতে কারোর কোন ক্ষতি না হয়।
বাড়িঘর বালু চাপা পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি দুর্ঘটনা। ড্রেজিং এর বালু খুব স্পিডে পড়ে। গাইড বাধ ভেঙে বালু ঢুকে পড়ে।
১১ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় মেম্বার সোহেল রানা বলেন, ঘটনার পর থেকে দুই দিন ড্রেজিং বন্ধ ছিল। তাই এই কমিটি করে ১৬ এপ্রিল থেকে ড্রেজিং চালু করা হয়েছে। কমিটি করার মূল উদ্দেশ্যই কাজ চালু রাখা। তারপরও কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে অফিসিয়াল পর্যায়ে আলোচনা করে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর স্থানীয়দের পুনর্বাসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা যেখানে ছিলো সেখানেই বসবাস করতে পারবেন।
সারাবাংলা/এএম