রংপুর সিটিতে সড়ক বাতি বসানো যায়নি ২ বছরেও
২৪ এপ্রিল ২০২১ ০৮:১৭
ঢাকা: রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে সড়কবাতি স্থাপনের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। কিন্তু প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত একবছর ১০ মাস সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়নি। এরপর আরও চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বসেনি সড়কবাতিগুলো। অর্থাৎ দুই বছর দুই মাস সময়েও রংপুর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে সড়কবাতি বসানো যায়নি। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর সবশেষ কিছু কারণে প্রকল্পটিতে কিছু রদবদলের জন্য আনা হয়েছে সংশোধনী প্রস্তাব। তাতে সময় বা ব্যয় না বাড়লেও অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে সমন্বয় করা হবে।
‘রংপুর সিটি করপোরেশনে ৩৩টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন রাস্তায় সড়ক বাতি স্থাপন প্রকল্প’ শীর্ষক ২০১৯ সালের মার্চ হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় গত জানুয়ারিতে ব্যয় না বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এর মধ্যে গত ১৫ মার্চ বিভাগীয় মূল্যায় কমিটির (ডিপিইসি) এক সভায় প্রকল্পটি সংশোধন করার প্রস্তাব উঠে আসে। এ ক্ষেত্রে চারটি কারণও তুলে ধরা হয়— অনুমোদিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখিত পোলের সিসি ওয়ার্ক আইটেম বাদ দেওয়া, ইকোনমিক কোডের ভুল সংশোধন, আটটি প্যাকেজের চুক্তিমূল্য প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে কম হওয়া এবং বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে নতুন একটি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্তি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সই করা ডিপিইসি সভার কার্যবিরণীতে বলা হয়েছে, ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বর্তমানে ব্যয় ও মেয়াদ অপরিবর্তিত রেখে আন্তঃঅঙ্গব্যয় সমন্বয় করে সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে।
ডিপিইসি সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সভার সভাপতি প্রথম সংশোধনীর কারণ জানতে চান। এর জবাবে প্রকল্প পরিচালক জানান, রংপুর মহানগরীতে পরিবেশবান্ধব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, টেকসই, আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং পথচারীদের চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করা, রাত্রিকালীন ব্যবসার সুবিধা বাড়ানোসহ স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর জন্য প্রকল্পটির ডিপিপি তৈরি করা হয়েছিল। মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে ইলেকট্রিক্যাল পোলের সঙ্গে সিসি আইটেম অন্তর্ভুক্ত থাকায় পোলের পোলের সিসি ওয়ার্ক আইটেসটি সংশোধিত প্রস্তাব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মূল ডিপিপিতে ৬ ইঞ্চি ও ৪ ইঞ্চি ইলেকট্রিক্যাল পোলের কথা উল্লেখ থাকলেও এলজিইডির রেট শিডিউলে কেবল ৬ ইঞ্চি ও ৩ ইঞ্চি ইলেকট্রিক্যাল পোলের আইটেম থাকায় রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, মূল ডিপিপিতে কিছু অঙ্গের ইকোনমিক কোড ভুল থাকায় তা সংশোধন করে হালনাগাদ ইকোনমিক কোড উল্লেখ করা হয়েছে। আটটি প্যাকেজের চুক্তি মূল্য প্রাক্কলিক মূল্যের চেয়ে ১০ শতাংশ কম হওয়া এবং পোলের সিসি ওয়ার্ক আইটেম বাদ দেওয়ায় সাশ্রয় হওয়া অর্থ দিয়ে একটি অতিরিক্ত প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু অঙ্গেও ইকোনমিক কোড ভুল থাকায় ঠিকাদারের মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এসব কারণেই প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।
সভায় অংশ নেওয়া পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রতিনিধি অতিরিক্ত প্যাকেজের বিষয়ে জানতে চান। এর জবাবে প্রকল্প পরিচালক জানান, বর্তমানে শহরের মূল অংশে সিএফএল বাতি ব্যবহার করা হয়। মূল প্রকল্পের আওতায় উদ্বৃত্ত দরের চেয়ে ১০ শতাংশ কম মূল্যে কার্যাদেশ দেওয়ায় ওইসব খাতে কিছু অর্থ সাশ্রয় হয়। ওই অর্থ দিয়ে সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ড ও ভিআইপি রোডে লাগানোর জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার ৬৪টি বাতি কেনা যাবে। এজন্য অতিরিক্ত একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে।
সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পর সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমদ প্রকল্পটি সংশোধনের সুপারিশ করেন। তবে প্রকল্পে আওতায় সংগৃহীত বাতির গুণগতমান নিশ্চিতসহ অন্য প্রকল্পের সঙ্গে এ প্রকল্পে কার্যক্রম যেন দ্বৈততা না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাগিদ দেন।
প্রকল্পের যাবতীয় কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা সংশোধিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে বলেন হেলালুদ্দীন আহমদ। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন আইএমইডি, পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থবিভাগের প্রতিনিধিসহ উপস্থিত সদস্যরা।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর