Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এমপিও’তে নেই অনার্স-মাস্টার্স, বিপাকে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা

তুহিন সাইফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ এপ্রিল ২০২১ ১০:০৮

ঢাকা: এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্তের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। যেখানে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও হয়েছে। ওই কমিটি যাচাইবাছাই করে দেখবে অনার্স-মাস্টার্স প্রোগ্রাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে। কমিটি এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজের অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষকদের পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক নিরাপত্তার দিকটিও বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করলেও এই বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি।

এসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা দিবসে প্রথম আলোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। জানুয়ারি মাসে ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, যেসব বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স রয়েছে, পর্যায়ক্রমে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেছিলেন, অনার্স-মাস্টার্স এর পরিবর্তে কলেজগুলোতে বিভিন্ন ধরনের শর্ট-কোর্স পড়ানো হবে। যারা এসব কলেজ থেকে বিএ, বিএসসি ও বি-কম পাস করবেন তাদের জন্য ওই কোর্সগুলো থাকবে। এসব শর্ট কোর্স পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এরপরই এই পরিকল্পনার কথা আলোচনায় আসে। শিক্ষকরাও এ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া দিতে থাকেন। পরে কাজ শুরু করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। তারা জানান, বেসরকারি অনেক কলেজে অনার্স স্তরের পড়াশোনার মান বজায় রাখছে না। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। উচ্চতর শিক্ষাকে বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে আরও বেশি প্রয়োগিক করে তোলা হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ২০২১ সালের ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালাটি করা হয়। সেখানে অনার্স-মাস্টার্স স্তর না রাখায় শিক্ষকরা নতুন করে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন। গেল ২৮ বছর ধরে এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজে ডিগ্রি স্তরের শিক্ষকরা সরকারি বেতন-ভাতার অংশ পেলেও অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা পাচ্ছেন না। এটি সমাধান হওয়ার আগেই তাদের ওপর চেপে বসেছে নতুন এই সিদ্ধান্তের ‘শঙ্কা’। এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি করেছেন।

বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে তাদেরকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা ভঙ্গ করা হচ্ছে। তিনি এই প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান।

তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তর উঠিয়ে দিলেও বিধি অনুযায়ী, নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের কারও চাকরি যাবে না। বঞ্চিত হবেন না। শর্ট কোর্স প্রশিক্ষণ পাবেন শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী এই আশ্বাস দিলেও ২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মিল্টন মণ্ডল বলেন, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমাদেরকে নিয়ে এই ছেলেখেলার কি কারণ? ১৯৯৩ সাল থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর আমাদের বেতন নিয়ে টালবাহানা চলছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলে দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ যেন বিধিবিধান অনুযায়ী, নির্ধারিত স্কেলে শিক্ষকদের মূল বেতন দেয়। কিন্তু এই নির্দেশ সব প্রতিষ্ঠান মানছে না। এতে করে শিক্ষার মান খারাপ হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদেরকে জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্ত করতে হবে। এটি না করা হলে নিদারুণ বৈষম্য করা হবে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সাল থেকেই অনার্স-মাস্টার্স স্তরের অনুমোদন বন্ধ করে দিয়েছে। কলেজগুলোতে পর্যায়ক্রমে এই প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এই সিদ্ধান্তের পর গত ১৩ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে বেসরকারি কলেজের নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকরা। সেখানে বলা হয়, দেশের ৩১৫টি বেসরকারি কলেজের অনার্স স্তরের শিক্ষকরা বর্তমানে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষার এই স্তরটিতে নন এমপিও হিসেবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।

সারাবাংলা/টিএস/এনএস

অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর