ভ্যাকসিন নিয়ে বেক্সিমকোর কিছু করার নেই, সরকারের দায়িত্ব: পাপন
২৪ এপ্রিল ২০২১ ১৫:৩৯
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আনার দায়িত্বে ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। সিরাম ইনস্টিটিউটে সোল এজেন্ট হিসেবে একটি তিন পাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসার কথা ছিল। তবে ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসার পরে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভারতের দেওয়া রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশে আর কোনো ভ্যাকসিন আসে নাই। কবে আসবে সেটা নিয়েও নিশ্চিতভাবে কোনো কিছু বলতে পারছে না কেউ।
এমন অবস্থায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, আমাদের (বেক্সিমকো) এখানে কিছু করার নেই। সব কাজ ভাগ করা। সরকারের দায়িত্ব আগে টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন বুক করা। সরকার সেটা করেছে। বেক্সিমকোর দায়িত্ব ছিল সেটা দেশে এনে ড্রিস্টিবিউট করা। সেটা করেছে। এখানে সব দায়িত্ব আমাদের। সিরামের কোনও বিষয় নিয়ে আমাদের ইস্যু নেই। ওরা যদি না দেয় সরকার আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। এখন সরকারকে ভ্যাকসিন পাঠানোর কথা জোরালোভাবে বলতে হবে ভারতের কাছে।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নাজমুল হাসান পাপন।
বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘সরকার অগ্রীম টাকা দিয়ে যে ভ্যাকসিন কিনে নিয়েছে এটি আটকানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্য দেশের সঙ্গে কী হলো তা আমার জানার দরকার নেই। আমরা আমাদের টাকা দিয়েছি। টাকা নিয়ে দেবে না, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।’
তিনি বলেন, ‘সিরাম যদি ভ্যাকসিন না দেয় তবে সরকার আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। এটিও জরুরি না আবার। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা বলে আসছি, বিশ্বাস করি যে ভারত বাংলাদেশের বন্ধু। সময় এসেছে সেটা ওদের দেখাতে হবে। এতো মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনার দরকার নেই। দয়া চাচ্ছি না। আমার ন্যায্য পাওনা ভ্যাসকিন সেটা চাচ্ছি।’
ভ্যাকসিন কবে আসবে সে বিষয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘এটি বলা খুবই কঠিন। যেটি বলা হচ্ছে, ওরা আমাদের ৫০ লাখ পুরো রেডি করে রেখে দিয়েছে। কোনো সমস্যা নেই। ওরা ওদের মিনিস্ট্রি অব এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছে। গত মাসে ৫০ লাখ পাঠানোর কথা ছিল। ওরা দিয়েছে ২০ লাখ। এ মাসে এখনও দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সেকেন্ড ডোজের শর্টেজ হয়ে যাবে সামনে। এ জন্য আমাদের এটা ইমিডিয়েট পেতে হবে। যেহেতু সিরাম ইনিস্টিটিউট, ওদের সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমাদের লিখিতভাবে জানিয়েছে তাদের সরকার আটকে রেখেছে, ছাড়পত্র পাচ্ছে না…কাজেই আমি মনে করি আমাদের সরকারের চুপ করে থাকার কোনো কারণ নেই। সরকারকে ইমিডিয়েটলি বলা উচিত, এই ভ্যাকসিন আমি অগ্রীম টাকা দিয়ে কিনেছি। আমাদের দিতেই হবে। এটি জোরালোভাবে বলতে হবে। আনঅফিশিয়ালি, ফোনে একটু কথা বলা- এভাবে না। আমার মতে, শক্ত স্টেপ নিতে হবে।’
পাপন বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড মার্কেটে চারটি ভ্যাকসিন আছে যেগুলো অ্যাপ্রুভড। ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন, মর্ডানা ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা। আর কোনোটা অ্যাপ্রুভালের আগে আনা সম্ভব না।’
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমরা বেক্সিমকো সরকারকে ভ্যাকসিন এনে দিতে সহায়তা করেছি। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে ভ্যাকসিন বানানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না যাদের ফ্যাসিলিটিজ আছে তারা কেন এ ব্যাপারটা নিয়ে এগিয়ে আসছে না। একটা জিনিস বলতে পারি, এ বছর আমরা বেক্সিমকো আশা করছি স্বপ্ন দেখছি, লোকাল প্রোডাকশন ছাড়া কোনো পথ নেই এবং এমন কোনও ওষুধ নেই যেটা বাংলাদেশ বানাতে পারে না। এখন পর্যন্ত বেক্সিমকোর পরিকল্পনা নেই। কারণ অন্যান্য ফ্যাসিলিটিজ তো আছেই। তাদের বানানো উচিত।’
এখন আরেকটু সময় দিতে হবে। আর দুই মাসের মধ্যে দেখবেন প্রচুর ভ্যাকসিন চলে আসবে বলে মন্তব্য করেন নাজমুল হাসান পাপন।
তিনি বলেন, ‘আমি ক্লিয়ার করছি, এই ক্রাইসিস জুন পর্যন্ত থাকবে। জুনের পর কোনো ক্রাইসিস থাকবে না। আমাদের দেড় কোটি ডোজের টাকা দিয়ে দিয়েছি। যেটা আমাদের মে’র মধ্যে পাওয়ার কথা। আমরা ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছি। আমাদের ৮০ লাখ বাকি। এ ৮০ লাখ পাওয়ার পর যদি মনে করি ওদের থেকে আর নেবো না, তখন অন্য অপশনে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেটা সরকার পে করেছে, জনগণের টাকা। এটা আটকানোর অধিকার নেই। যত ক্রাইসিস থাকুক না কেন। ভারত সরকারও তাদের অগ্রীম টাকা দেয়নি। আমরা অগ্রীম টাকা দিয়ে ওদের বুক করেছি। গত বছরের অক্টোবরে বুক করেছি।’
সারাবাংলা/এসবি/একে