মহামারিতেও কাজের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি ডা. শামসুজ্জামান
২৪ এপ্রিল ২০২১ ২০:২৮
‘আহুক করোনা, থাকব নিরাপদে, আহুক আরোনা, করোনারে ডরাই না’। না, করোনাভাইরাসকে অবহেলা বা অগ্রাহ্য নয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের আশাবাদ থেকে এ কথা বলেছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের (এনআইএলএমআরসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান তুষার। সারাবাংলার ফেসবুক লাইভ ‘নিউ নরমাল’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এমন আশাবাদ জানিয়েছিলেন তিনি।
কেবল আশাবাদ অবশ্যই নয়, সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গেছেন ডা. শামসুজ্জামান তুষার। দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় ল্যাবরেটরি মেডিসিনকে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন তিনি। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়েও রেখেছেন ভূমিকা। শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই প্রাণ গেল তার।
আরও পড়ুন- অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান তুষার আর নেই
শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ডা. শামসুজ্জামানের। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১২ এপ্রিল থেকে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সারাবাংলা নিউ নরমাল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ডা. শামসুজ্জামান আশার কথাই শুনিয়েছিলেন সারাদেশের মানুষকে। বলেছিলেন, শত বছর পর পর বিশ্বে যে মহামারি আসে, সেই এক মহামারির সময় মানবিক কাজের সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না তিনি। তাই বয়সের দিক থেকে ঝুঁকিতে থাকলেও দেশের মানুষের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন করোনা মোকাবিলায়।
আরও পড়ুন- ‘অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি’
নিজের কাজ ও দেশের মেধাবীদের ওপর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ছিল ডা. শামসুজ্জামান তুষারের। সে কারণেই তিনি বলেছিলেন, কোভিড-১৯-এর জন্য যে বিশ্বমানের ভ্যাকসিন, সেটাও আমাদের বাংলাদেশ থেকেই তৈরি করা সম্ভব।
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের ওপর শামসুজ্জামানের ভরসা ছিল অনেক। তবে বাংলাদেশের গবেষণাগুলো প্রচারের ওপর গুরুত্ব দিতে বিজ্ঞানী ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। সেজন্য সমন্বিত উদ্যোগের কথাও বলতেন তিনি। তাহলেই বাংলাদেশের গবেষণা বিশ্ববাসী জানতে পারবে বলে তিনি মনে করতেন।
ডা. শামসুজ্জামান বলেছিলেন, করোনা প্রতিরোধে সবাইকে একই মনোভাব পোষণ করতে হবে। এতে সাহস বাড়বে এবং দেশের মানুষ আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। সবাই মিলে কাজ করলে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশ জয়ী হবেই।
যেভাবেই হোক, গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধাক্কা শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এ বছর ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মাত্রা ছাড়াতে থাকলে তাতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন ডা. শামসুজ্জামান। সেই ভাইরাসের কবল থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি মেলেনি তার। এ অবস্থায় ডা. শামসুজ্জামান না থাকলেও করোনা মোকাবিলায় তার কর্মস্পৃহা, তার আশাবাদটুকু অনুসরণ করবে সবাই— এই প্রত্যাশাটুকুই হয়তো করোনা মোকাবিলায় আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সারাবাংলা/এসএসএস