করোনা-লকডাউনেও সচল চট্টগ্রাম বন্দর
২৫ এপ্রিল ২০২১ ০০:০১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও পুরোপুরি সচল আছে চট্টগ্রাম বন্দর। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও বন্ধ হয়নি বন্দরের কার্যক্রম। সার্বিক এই অগ্রগতি নিয়েই রোববার (২৫ এপ্রিল) বন্দর দিবস পালন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছরের মতো এবারও কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই এই দিবসটি ঘিরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৬৬টি জাহাজ এসেছিল। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৯ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডলিং ছিল ১ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে জাহাজ এসেছে ৩৭৬টি। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৬ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডলিং ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন। এক বছরের ব্যবধানে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন কথা কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর প্রথম দিন ১৪ এপ্রিল ৫ হাজার ১৫১ টিইইউস কনটেইনার খালাস হয় এই বন্দরে। ১৫ এপ্রিল ৩ হাজার ১২২, ১৬ এপ্রিল ৩ হাজার ৫৯৮, ১৭ এপ্রিল ৩ হাজার ৫, ১৮ এপ্রিল ৩ হাজার ৫৫০, ১৯ এপ্রিল ২৫৮৩, ২০ এপ্রিল ৩ হাজার ৮০৪, ২১ এপ্রিল ৩ হাজার ৮৭০ ও ২২ এপ্রিল খালাস হয়েছে ৩ হাজার ৫৫৯ টিইইউস।
এর আগে, গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পরও কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস। ২০১৯ সালে হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস। ২০১৮ সালে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ ও ২০১৭ সালে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৩ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর।
১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন শুরু হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কনটেইনার পরিবহনেও সার্বিক অগ্রগতি আসে গত এক দশকে। বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানও গত এক দশকেই ওপরের দিকে যেতে শুরু করে।
গত এক দশকে ৩০ ধাপ এগিয়ে লন্ডনভিত্তিক শিপিং বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টের বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন ৫৮তম। ২০১৯ সালে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর এগিয়ে গিয়েছিল ছয় ধাপ। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে ৬৪তম।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর করোনার সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি উভয় জাহাজ হ্যান্ডলিংই প্রায় একমাস বন্ধ ছিল। এরপর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত, এমনকি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। ভারত, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুরসহ প্রতিবেশী বন্দরগুলোর তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ভালো।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘করোনার কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হলেও চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু ছিল। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় পণ্য খালাস প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। কিন্তু অল্প সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছিল। গত বছরের অভিজ্ঞতা কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা এবং বন্দরের অপারেশন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করছে। চলতি লকডাউনের মধ্যে খালাস স্বাভাবিক রয়েছে। কোন ধরনের জট নেই বন্দরে।’
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানির ৯২ শতাংশেরও বেশি পণ্য ও ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বন্দর ব্যবহারকারী, কর্মকর্তা-কর্মচারী- শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।
এক বিবৃতিতে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন স্বল্প-মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন ও সম্প্রসারণের জন্য বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এরই মধে পতেঙ্গায় লালদিয়াচর এলাকায় বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ৫২ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/আরডি/টিআর