করোনা প্রতিরোধে পাড়া-মহল্লার সংগঠনগুলোকেও কাজে লাগানোর তাগিদ
২৫ এপ্রিল ২০২১ ২৩:১৪
ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে অবস্থা আরও ভয়ানক হতে পারে। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে পাড়া-মহল্লার সংগঠনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে কমিটি করে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব হবে না। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে জনস্বাস্থ্যবিদরা এসব কথা বলেছেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধ করতে হবে। জনগণ, সরকার এবং প্রশাসনকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে জনগণের কাজ হচ্ছে, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। মাস্ক পড়া, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করা এবং করোনার ভ্যাকসিন নেওয়া— এই চারটি বিষয় জনগণকে মেনে চলতে হবে।’
ডা: এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘প্রশাসনের কাজ হচ্ছে- যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাদের এসব বিষয় মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় পাড়া বা মহল্লার গণ্যমান্য ব্যাক্তি যেমন- শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ছাত্র ও পেশাজীবীদের নিয়ে কমিটি তৈরি করা। আর কমিটির কাজ জনগণকে বোঝানো। যদি তাদের বোঝানো যায়, তবেই তারা সচেতন হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে উদ্যোগ নিলে করোনার লাগাম টেনে ধরা যাবে। তা না হলে সংক্রমণ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এছাড়া প্রচার-প্রচারণা আরও বাড়াতে হবে। এখন চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে অবস্থা, তৃতীয় ঢেউ আসলে কিন্তু ভয়বহতা আরও বেশি বাড়বে। এরই মধ্যে কোনো কোনো দেশে চার নম্বর ঢেউ চলছে। তাই জনগণসহ সবাইকে সতর্ক হতে হবে।’
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, নিজের সুরক্ষা নিজের হাতে। আবার নিজেকেই শুধু সুরক্ষিত রাখলে হবে না, পরিবার-প্রতিবেশীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে। কেননা একজন অরক্ষিত থাকলে বাকিরা আক্রান্ত হতে পারে। তাই জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে পাড়ায়-মহল্লায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে করোনা প্রতিরোধ করতে হবে। আর এই জনসম্পৃক্ত করার কাজ প্রশাসনকেই করতে হবে। যেখানে জনপ্রতিনিধি, সাংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধি থাকবে।’
চিকিৎসা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠক অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি বলেন, ‘পাড়া-মহল্লায় আমাদের যে সংগঠনগুলো রয়েছে, এই সময়ে তাদেরকে অ্যাক্টিভ করা খুব জরুরি। কেননা সরকার বা প্রশাসনের পক্ষে একা সবকিছু করা সম্ভব নয়। প্রশাসনের কাজের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে পারলে শতভাগ সুফল পাওয়া সম্ভব। যেমন- লকডাউনে প্রশাসন বড় বড় সড়কে ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজগুলো করেছে। কিন্তু এই সময়ে যদি পাড়া-মহল্লার সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে কাজ করা যেত, তবে সেখানকার লোকজন আরও বেশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলত। এতে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আরও সহজ হতো।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিটা খুব জটিল এবং নভেল করোনাভাইরাসের আক্রমণের ধারাও পাল্টাচ্ছে। তাই এর থেকে সহজে বের হওয়ার সুনির্দিষ্ট পথ নেই। এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা। আর্ন্তজাতিক সংস্থার মাধ্যমে এই রোগকে প্রতিরোধ করতে আমরা গাইডলাইন পাচ্ছি। কিন্তু এই গাইডলাইনকে জাতীয় পর্যায়ের নিজেদের মতো করে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি বলেন, ‘এগুলো করার জন্য প্রি-কন্ডিশন হচ্ছে জনসম্পৃক্ততা। এলাকাবাসী যদি সংগঠিত না হয় তাহলে প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে কিছু হবে না। তাই এগুলোর জন্য সচেতনতা ও সংগঠন গড়ে তোলা দরকার। যতক্ষণ সেগুলো না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধরনের বিধি-নিষেধ ঠিক মতো পালন হবে না। আমাদের পথ ওইটাই যে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করা, পাড়া-মহল্লার সংগঠনকে কাজে লাগানো। কেননা, আমাদের যে অবস্থা তাতে রাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে হত-দরিদ্র বা বঞ্চিত মানুষের দায়িত্ব নিতে পারবে- এমনটা আশা করা ঠিক না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার সামাজিক সংগঠনগুলোও এগিয়ে আসছে না। গতবার যাও এগিয়ে এসেছিল এবার কিন্তু তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না।’
সারাবাংলা/জেআইএল/পিটিএম