২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের ‘ঘনিষ্ঠ’ মামুনুল পাকিস্তানেও ছিলেন
২৬ এপ্রিল ২০২১ ০১:২৯
ঢাকা: ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িত জঙ্গিদের ‘ঘনিষ্ঠ’ আত্মীয় ছিলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তাদের একজনের সঙ্গে প্রায় দেড় মাস পাকিস্তানেও ছিলেন তিনি।
তাছাড়া মামুনুল হকের শ্বশুরের (প্রথম স্ত্রীর বাবা) আপন ভায়রা ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মেজর ডালিম। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তিনি।
রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ।
২০২০ সালে মোহাম্মদপুরে মারামারির একটি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর সাতদিনের রিমান্ডে ছিলেন মামুনুল হক। আজ ছিল শেষ দিন। সাতদিনের রিমান্ডে মামুনুলের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য পেয়েছেন বলে জানান ডিসি হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘রিমান্ডে আমরা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তার মধ্যে একটি হলো মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রীর বাবা অর্থাৎ তার শ্বশুর বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিমের আপন ভায়রা ভাই। এটি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আরও বিশদ তথ্য সংগ্রহ করছি আমরা।’
ডিসি হারুন বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, মুফতি নেয়ামত উল্যাহ যখন ১৫-২০ বছর পাকিস্তানে থাকার পর দেশে এসে মোহাম্মদপুরে জামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন তখন তার সঙ্গে মামুনুল হকের আপন বোনকে বিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে তাদের মধ্যে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় জড়িত তাজের সঙ্গে মুফতি নেয়ামত উল্লাহর সম্পর্ক ছিল।’
‘এ হামলার ঘটনায় যখন নেয়ামত উল্লাহ গ্রেফতার হন তখন মামুনুল হকের বাবা আজিজুল হক ছিলেন চার দলীয় সরকারের নেতা। সেই সুবাদে তখন নেয়ামত উল্লাহকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনেন তিনি। এরপর মামুনুল হক এবং তার ভগ্নীপতি নেয়ামত উল্লাহ প্রায় ৪০ দিন পাকিস্তানে ছিলেন এবং সেখানে একটা ধর্মীয় দলকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করে সেটার আলোকে মওদুদি, সালাপি, হানাফি, কওমি এবং দেওবন্দিসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিদের একত্রিত করে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের উদ্দেশ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন ‘— বলেন হারুন।
তিনি বলেন, ‘এ যোগাযোগ রক্ষা করতে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় তার আপন ভায়রা ভাই কামরুল ইসলাম আনসারীর। কামরুল ইসলাম জামায়াতের বড় নেতা। ফরিদপুরের টেকেরহাটে তার বাড়ি। তার মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে জামায়াতের গোপন আঁতাত ছিল। তার মাধ্যমে মামুনুল হক জামায়াতকেও তার বলয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। আর এর মাধ্যমে হেফাজতকে কাজে লাগাতেন, দেশের কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না।’
ডিসি হারুন বলেন, ‘এসব কিছুর মধ্যে তার উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় যাওয়া। তার এ উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্তের জন্য তিনি হেফাজত, বিএনপি জামায়াতকেও কাজে লাগিয়েছিলেন। এজন্য দেশের মাদারাসাগুলোর ছোট ছোট শিশুদের সহিংসতায় নামিয়েছিলেন। তবে সাধারণ হুজুররা এসব জানতেন না।’
ভারতের বাবরি মসজিদের কথা বলে মামুনুল হক বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এনে দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় উগ্রবাদী কাজে জড়িত ব্যক্তিদের পেছনে খরচ করেছেন বলেও জানান ডিসি হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা রিমান্ডে আনার পর তার মোবাইলটি উদ্ধার করি। ওই মোবাইলে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। বিশেষ করে- কাতার, দুবাই এবং পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তার কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা এসেছে। সে প্রমাণ মোবাইলে পাওয়া গেছে। এসব টাকা সে বিকাশেও এনেছে।’
হারুন বলেন, ‘মামুনুল হক বাবরি মসজিদের কথা বলে এসব টাকা আনতেন। কারণ, তিনি জানতেন বাবরি মসজিদের কথা বললে একটা ইসলামিক সেন্টিমেন্ট তৈরি হবে। তিনি মনে করতেন, কিছু মানুষ বাবরি মসজিদের কথা বললে ভারত বিদ্বেষী হয়ে উঠবে। এ কারণে বাবরি মসজিদের নাম দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা এনেছেন। এসব টাকা তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় উগ্রবাদী কাজে জড়িত ব্যক্তিদের ম্যানেজ করতে খরচ করেছেন।’
এছাড়া পাকিস্তানের একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে মামুনুল হক সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও জানান ডিসি হারুন অর রশিদ। তবে মামুনুল হকের সঙ্গে পাকিস্তানের কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/এজেড/পিটিএম