আবারও ৭ দিনের রিমান্ডে মামুনুল
২৬ এপ্রিল ২০২১ ১১:৫৭
ঢাকা: বিলুপ্ত হেফাজতে ইসলামের কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে পৃথক দুই মামলায় আবারও ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। সোমবার (২৬ এপ্রিল) সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। মামলাগুলোর মধ্যে পল্টন থানার ৪ ও মতিঝিল থানার মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
এর আগে সাতদিনের রিমান্ডে শেষে তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুল হককে আদালতে হাজির করে পল্টন ও মতিঝিল থানার পৃথক দুই মামলার ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় তারপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ জামিনের বিরোধী করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক এ রিমান্ডের আদেশ দেন।
একই আদালত হেফাজত নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবের পল্টন থানার দুই মামলায় ৭ দিন আর মতিঝিল থানার এক মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এছাড়া আরেক হেফাজত নেতা মাওলানা জালাল উদ্দিনের দুই মামলায় ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের জানান, মামুনুল হক, জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের সময় তাণ্ডব চালায়। তারা কোরআন শরীফ পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। সেদিনের ঘটনায় সাতজন মারা যায়। ধর্ম প্রচারের নামে তারা নাশকতা করেছে। হেফাজত ইসলামের ২০১৩ সালের সমাবেশের সাথে বিএনপি-জামায়াত জড়িত। তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তারা মিথ্যা প্রচার করে হেফাজতের শত শত নেতাকর্মী মারা গেছে। কিন্তু পরে তারা এর কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
আরও পড়ুন: ৭ দিনের রিমান্ডে মামুনুল হক
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা জানান, তিন আসামিকে যে মামলায় রিমান্ডে নেয়া হলো তা তদন্তাধীন। আপনারা জানেন, কোনো মামলার তদন্ত শুরু হলে তা দ্রুত শেষ করতে হবে। তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে হবে। যদি কোনো তদন্ত রিপোর্ট দাখিলে দেরিহ য় তাহলে সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের কাছে লিখিতভাবে অনুমতি নিয়ে বলবেন, কেন দেরি হচ্ছে। আজ সাতটা বছর মামলাগুলো তদন্ত হলো না, চার্জশিট হলো না। তাহলে এ মামলাগুলো কীভাবে রয়েছে। মুলত মামলাগুলো কার্ভপেজ। সরকার মামলাগুলো জিয়িয়ে রেখেছে। হেফাজতের সাথে সরকারের যখন সম্পর্কের অবনতি হয় তখন তাদের ধরে নিয়ে আসবে। আবার যখন জামিন পাবে, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে আবার ছাড়বে। এসব মামলায় কখনো চার্জশিট হবে বলে আমার মনে হয় করিনি। মামলাগুলো পুরাতন। পুরাতন মামলায় আইন মেনে রিমান্ডে নেয়া হয়নি। আসামিরা পলাতক ছিলেন না।
এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন মামুনুল হক। মামুনুল হকের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের অনুমতিক্রমে মামুনুল হক আদালতকে বলেছেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ২৬ মার্চ তিনি বাংলাবাজার জুমা মসজিদে নামাজ পড়ান। নামাজ শেষে পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিরা জড়ো হয়েছেন। ভিতরে অনেক মুসল্লি আটকা পড়ে গেছেন। তারা আমাদের বিশ্বাস করতে পারছে না। আপনি (মামুনুল হক) একটু আসেন। এসে থেকে তাদের বের করে দেন। একজন ডিআইজির অনুরোধে তিনি বায়তুল মোকাররম যান। সেখানে গিয়ে তিনি তাদের বের করে দেন। এরপর তিনি মসজিদে যান। তিনি তো সেদিন ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন না। তিনি ঘটনার বিষয়ে জানেনও না। পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তিনি সেখানে যান। পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধ রক্ষা করেন। সেই দিন পুলিশের অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে আজকে তার বিরুদ্ধে এমন একটা মামলা। যা খুবই দু:খজনক। চাইলে সেদিনের তার পুলিশ রেকর্ড চেক করার কথাও আদালতকে বলেছেন মামুনুল হক।
তিনি আরও বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি, আসামিরা আলেক ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। পুরাতন মামলা। আসামিদের রিমান্ড নামঞ্জুরের প্রার্থণা করেছি। এরপর আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।
গত১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে বেলা ১২টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: রিসোর্টে নারীসহ অবরুদ্ধ মামুনুল হক
এর আগে সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে নারী নিয়ে ধরা পড়েন মামুনুল হক। ঘটনার দিন সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের আসামি করে তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে একটি মামলায় মামুনুল হক প্রধান আসামি।
পুলিশ জানায়, ২০২০ সালে মোহাম্মাদপুরে একটি ভাঙচুরের মামলায় মামুনুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৬ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করার অভিযোগে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতাকালে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া হেফাজতে ইসলাম হরতাল দিলে ওইদিনও নাশকতা চালানো হয়। এ সব অভিযোগে হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এআই/এএম