করোনায় ২২ দিনে সুপ্রিম কোর্টের ১২ আইনজীবীর মৃত্যু
২৬ এপ্রিল ২০২১ ১২:১৬
ঢাকা: করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত অন্তত শতাধিক আইনজীবী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১২ জন। এর মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরুও রয়েছেন।
চলতি বছরের ৩ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সুপ্রিম কোর্টের এই ১২ জন আইনজীবী না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর বিপুল সংখ্যক আইনজীবী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের শুনানি চলাকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আইনজীবীসহ সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও আইন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, করোনা ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ দিনে ১২ জন আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েই অধিকাংশ আইনজীবীর মৃত্যু হয়।
গত ৩ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর পারভেজ। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৫ এপ্রিল আইনজীবী রশিদ আহমেদ (৫১) করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন আইনজীবী মমতাজ আলী ভূঁইয়া (৭০)। ১০ এপ্রিল মো. ওবায়দুল্লাহ (জাকির) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১৩ এপ্রিল মারা যান আইনজীবী সৈয়দ মোকাদ্দাস আলী। ১৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু। ১৫ এপ্রিল মৃত্যু হয় আইনজীবী মনজুর কাদেরের। ১৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন রেজিনা চৌধুরী জেনি (৫৭)।
২৩ এপ্রিল সকালে মারা যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী লিও সাহা কেনেডি। তিনি করোনা পজেটিভ হওয়ার পর বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পরে করোনা নেগেটিভও হয়েছিলেন। কিন্তু শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
২৪ এপ্রিল রাতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জিয়াউর রহমান খান মৃত্যুবরণ করেন। তার বাবা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান।
২৫ এপ্রিল সকালে শেখ ইউনুস আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই দিন বিকেলে আইনজীবী নাজমুল হাসান (৭৮) মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মালা রউথ গত ১৯ মার্চ মারা গেলেও তার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি কারও জানা ছিল না। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আলী হায়দার কিরণ মারা যান। এর আগে ১৩ জানুয়ারি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার আব্দুল মান্নান (৭০) মৃত্যুবরণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আক্রান্ত শতাধিক আইনজীবী বর্তমানে বাসা ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে আছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনশী ফখরুল ইসলাম, আইনজীবী আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, সাজ্জাদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল খায়ের, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আরেক সাবেক সহ-সভাপতি মুহাম্মদ আসাদ উল্ল্যাহ, আইনজীবী মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান, মাহিন এম রহমান ও তার স্ত্রী ফারজানা ছাত্তার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন বণিক, একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া, আইনজীবী দেওয়ান হুমায়ুন কবির রিপন ও যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন শিকদার এবং সোহেল রানা।
এছাড়াও আরও অনেক আইনজীবী বাসায় করোনার চিকিৎসা গ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব।
জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক সারাবাংলাকে বলেন, করোনাকালে আমরা বহু সহকর্মীকে হারিয়েছি। সবার জন্য দোয়া চাই। এ বিষয়ে সবার কাছে অনুরোধ, আমরা সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। বিশেষ করে ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই যেন মাস্ক পরিধান করি।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি করোনাকালে আইনজীবীদের মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সেই স্মরণসভায় জানানো হয়, ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকশ আইনজীবী ও বিচারপতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২৫ জনের। তাদের মধ্যে দুজন বিচারপতিও রয়েছেন।
সবার জন্য দোয়া চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের অনেক আইনজীবীকে আমরা হারিয়েছে। তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এবং যারা বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন; তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসেন, এই প্রার্থনা করছি।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/এএম