অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’র ধান যাবে সারাদেশে
২৬ এপ্রিল ২০২১ ২২:২০
বগুড়া থেকে: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে তৈরি করা হয়েছিল ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। যেটি পরবর্তী সময়ে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পায়। সেই ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ চিত্রকর্মের ধানকাটা উৎসবের উদ্ধোধন হয়েছে। এই শস্যচিত্রে উৎপাদিত ধানের ৭৫ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এবং বাকি ২৫ শতাংশ শুভেচ্ছা স্মারক ও অনুপ্রেরণায় প্রতীক হিসেবে বালেন্দার কৃষাণ-কৃষাণী এবং সারাদেশের কৃষক প্রতিনিধিদের মাঝে বিনামূল্যে বণ্টন করা হবে। ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় পরিষদের নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’র ধান কাটার উদ্ধোধন হয়। কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের পরিচালনায় ধানকাটা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। কর্মসূচির উদ্ধোধন ঘোষণা করেন ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। আরও বক্তৃতা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের সদস্য সচিব কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগিবুল হাসান রিপু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ম. আব্দুর রাজ্জাক, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুলসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা মোড়ে অনুষ্ঠানের মঞ্চ বানানো হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে আয়োজক ও অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থল গিয়ে উপস্থিত হন। এরপর আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় ধানকাটা।
ধানকাটা কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণার পর বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির আবহে কৃষকের প্রতীকী মাথায় গামছা, হাতে কাস্তে নিয়ে ধানখেতে গিয়ে ধান কাটায় অংশ নেন নেতারা। এ সময় সাউন্ডবক্সে ‘মাইজ্যা ভাই, সাইজ্যা ভাই কই গেলো রে…’ ধান কাটার আঞ্চলিক গান উৎসবের আবহ সৃষ্টি করে। মাঠে ধান কাটার পর নেতারা হারভেস্টার মেশিনে প্রতীকী চালকের ভূমিকায় উঠে পড়েন। এরপর হারভেস্টার মেশিন দিয়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধানকাটা শুরু হয়।
একদিকে মাহে রজমান, আরেকদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, সেইসঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ; সবকিছুর মধ্যেই ধানকাটা উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তুলতে বগুড়া জেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল।
এ সময় আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখেছি ১০৫ বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার ৬০০ মণ ধান উৎপন্ন হবে। এর ৭৫ শতাংশ ধান আমরা প্রোসেস করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দেবো। প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী ত্রাণ দেন, সেই কার্যক্রমের সাথে প্রতীকী অর্থে আমরা সম্পৃক্ত হবো। এবং এই মাঠে উৎপাদিত বাকি ২৫ শতাংশের একটি অংশ বালেন্দার কৃষাণ-কৃষাণী ও কৃষক প্রতিনিধিদের মধ্যে একাংশ বিতরণ করা হবে। বাকি অংশ কৃষক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় শুভেচ্ছা স্মারক ও অনুপ্রেরণায় প্রতীক হিসেবে পাঠানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর শস্যচিত্রে যে শস্য উৎপাদিত হয়েছে, সেই শস্য সারাদেশে প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের কাছে আমরা হয়তো পৌঁছাতে পারব না। কিন্তু প্রতীকীভাবে পৌঁছে দিয়ে বাঙালি জাতিকে গর্বিত করব, সম্মানিত করব। যেটা অনুপ্রেরণায় অংশ থাকবে। এরকম চিন্তা থেকেই আমরা এখন এই ধান মাড়াই করে ন্যাশনাল এগ্রি কেয়ারের ফুড প্রোসেসিং জোনে পাঠাবো। তারপর সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় বণ্টন করা হবে।’
‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্বীকৃতি অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘যখন তারা ঘোষণা দিল তখন আমি অবাক হয়ে গেলাম। এমন একটি ঐতিহাসিক কাজ, যার সঙ্গে আমার স্মৃতি আছে। এটি আমাকে অবাক করে দিয়েছে।’
এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুকে এনে বাংলাদেশের কৃষিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হয়েছে। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু বাঙালির জন্য স্বপ্ন দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা এক এবং অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি ও বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবতেন। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাবতেন। তাই বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ডাকে এক ও অভিন্ন হয়েছিল। আর এই এক ও অভিন্ন আত্মা হয়েছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।’
‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে চীন থেকে আনা ডিপ ভায়োলেট রঙের হাইব্রিড ও দেশের ডিপ গ্রিন ধানের হাইব্রিড চারা রোপণ করা হয়। এজন্য স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে এই জমি ইজারা নেওয়া হয়। শস্যচিত্রের ফাইনাল লে-আউট তৈরি শেষ হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। ২০ ফেব্রুয়ারি শস্যচিত্রের খেতে ধান রোপণ শেষ হয়। ১৬ মার্চ সর্ববৃহৎ ক্রপ ফিল্ড মোজাইক হিসেবে এই শস্যচিত্র গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পায়। বিশাল এই কর্মযজ্ঞে আর্থিক, কারিগরি ও লোকবল দিয়ে সহায়তা করেছে ন্যাশনাল এগ্রি কেয়ার গ্রুপ।
ধানের গাছ ছোট অবস্থায় উঁচু থেকে ড্রোন দিয়ে ছবি তোলার পর বঙ্গবন্ধুর অবয়ব ফুটে উঠতে দেখা যায়। ধান চারা যত বড় হয়েছে ততই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে। ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’র আয়তন ছিল ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। এর দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৩০০ মিটার।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
অনুপ্রেরণা ধান প্রতীক শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শুভেচ্ছা স্মারক সারাদেশ