সাত কলেজ: ১০ দিনের নোটিশে পরীক্ষার প্রস্ততি রাখার নির্দেশনা
২৭ এপ্রিল ২০২১ ০০:৪০
চলমান করোনাভাইরাস সংকটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ রয়েছে। তবে সংক্রমণ কমলে যেকোনো সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের থমকে থাকা পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। এর জন্য শিক্ষার্থীদের ১০ দিনের নোটিশে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেছেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাইকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের যেন সেশন জটে ভুগতে না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় তারা আছেন। সুযোগ পেলেই সাত কলেজের সব পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া হবে।
সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে সাত কলেজের চলমান সমস্যা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ভার্চুয়াল এক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
‘সাত কলেজ: সমস্যার শনি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ। আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আশরাফ হোসেন, দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মুসতাক আহমেদ, তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শামিম হোসেন শিশির। এছাড়াও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল এই আয়োজনে যুক্ত থেকে সাত কলেজ প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন ও অভিযোগ তুলে ধরেন।
আলোচনায় অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, করোনাকালীন শুধু সাত কলেজেই নয়, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমেই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবুও সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাত কলেজ প্রশাসন থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ঈদের পর ক্যাম্পাস খুললে ধীরে ধীরে এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
পরীক্ষার রুটিন ও সিলেবাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সেলিম বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ১০/১৫ দিন আগে রুটিন প্রকাশ হবে— এমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এই সংক্ষিপ্ত নোটিশেই পরীক্ষার হলে বসতে হবে। সিলেবাস কমানোর সম্ভাবনা নেই। তবে শিক্ষার্থীদের মানসিক দিক বিবেচনা করে প্রশ্ন কিভাবে সহজ করা যায়, তা দেখা হবে।
অনেক শিক্ষার্থীর এমন ধারণা থাকে যে ভালো পরীক্ষা দিয়েও আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না— শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের কারও কোনো শত্রুতা নেই। শিক্ষার্থী যদি ভালো করে লিখে থাকে, তবে নম্বর পাবেই। পাস করবেই। তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। শিক্ষকরা কতদিন ক্লাস নিয়েছে, কয়টি ল্যাব নিয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা কত দিন ক্লাস ও ল্যাব করেছে— এই জবাবদিহিতার মাধ্যমেও সাত কলেজের অনেক সমস্যা নির্মূল করা হবে।
আলোচনায় তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আশরাফ হোসেন বলেন, করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে চলমান পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সাত কলেজ প্রশাসন। যেহেতু করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে, ভবিষ্যতে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে সেশন জট কমাতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো শিগগিরই নিয়ে নেওয়া হবে।
করোনাকালীন অল্প দিনে ফর্ম পূরণের নোটিশের আর্থিক ও যাতায়াতের সমস্যা নিয়ে তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আশরাফ বলেন, করোনায় যেহেতু আমাদের সেশন লস হয়েছে, সেক্ষেত্রে পরীক্ষার কার্যক্রম এগিয়ে নিতেই আমরা ফর্ম পূরণ কার্যক্রম শেষ করেছি। শিক্ষার্থীরা সব মিলিয়ে ২০ দিনের মতো সময় পেয়ে থাকে ফর্ম পূরণের জন্য। শিক্ষার্থীদের যেন করোনায় যাতায়াত বা অন্যান্য সমস্যা না হয়, সে বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।
চলমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই একটি সংকট কাল পার করছি। এখানে কেবল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই বিপর্যস্ত হয়নি, জীবনের সবকিছুই এখন বিপর্যস্ত। তাই সব শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিয়ে রাখতে হবে। যেন পরীক্ষার তারিখ হলে শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে না হয়। যতটুকু সম্ভব নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলে ঘোষিত তারিখে আমরা পরীক্ষা দিতে পারি— এমন মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
আলোচনায় মুসতাক আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেক প্রশ্ন থাকে, দাবি থাকে। বৈশ্বিক সমস্যাগুলো বাদে সাত কলেজের সার্বিক যে সমস্যাগুলো, তা নিয়ে কমিটি বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। সম্মিলিতভাবে সমাধানগুলো আসা জরুরি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে কোনো আপস নেই। আমি কাজ করে এসে ক্লাস করি, আমার আর্থিক সমস্যা— এগুলোর নিজের সমাধান করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেকে অন্য মাধ্যমে সক্রিয় করতে হবে।
অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বের মাধ্যমে করোনা পরবর্তী সময়ে দুই ঘণ্টা করে পরীক্ষা, শিগগিরই রুটিন, লকডাউন শেষেও অনলাইন ক্লাস, শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন, আট মাসে সেশনসহ সাত কলেজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়।
সারাবাংলা/এনএসএম/টিআর