প্রতি মাসেই হবে এলপিজির দাম নির্ধারণ, বাস্তবায়নে আসছে কঠোরতা
২৮ এপ্রিল ২০২১ ১২:৪২
ঢাকা: এই প্রথমবারের মতো দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু দেশের কোথাও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে প্রতিমাসে দাম নির্ধারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম নির্ধারণে আদালতের আদেশ ছিল বলেই করা হয়েছে। তবে নির্ধারিত দামের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এদিকে এলপিজির নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নে জ্বালানি বিভাগ শিগগিরই মাঠে নামতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এতদিন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দাম ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করতেন। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে এলপিজির দাম নিয়ে একরকম অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে। বেসরকারি কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার একেক জায়গায় একেক রকম দামে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে সরকারি গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়াও দুষ্প্রাপ্য। এমন প্রেক্ষাপটে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে আদালতে রিট করে। আদালতের আদেশেই গত ১২ এপ্রিল এলপিজির নতুন দাম নির্ধারণ বিইআরসি। কিন্তু দেশের কোথাও এখন পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি হয়নি। এই পরিস্থিতিতেই এখন থেকে প্রতি মাসেই নতুন করে এলপিজির দাম নির্ধারণ করবে বিইআরসি।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস (সিপি) অনুযায়ী দেশে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়। সেইসঙ্গে এলসি মার্জিন, জাহাজ ভাড়া, পরিবহন ব্যয়, ডিলারের লাভের অংশ এবং উদ্যোক্তাদের মুনাফা বিবেচনায় নিয়েই বাজার দর নির্ধারণ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিমাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করবে বিইআরসি। এ পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণে এখনি প্রস্তুতি শুরু করেছে সংস্থাটি।’
সরকার নির্ধারিত দামে দেশের কোথাও এলপিজি বিক্রি হচ্ছে না এমন অভিযোগে ক্যাব বিইআরসিকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে লাইসেন্সি আদেশ না মানলে কমিশন আইনের ৪২ এবং ৪৩ ধারা মতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ক্যাবের উপদেষ্টা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আদালতে রিট করেছিলাম এলপিজির দাম নির্ধারণের জন্য। আদালতের আদেশেই বিইআরসি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে কোথাও সেই দামে এলপিজি বিক্রি করতে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘শুধু দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না। দাম কার্যকর হচ্ছে কি না তা দেখাও কমিশনের কাজ। যা কমিশন করছে না। কমিশন প্রতিমাসে দাম সমন্বয় করে যে নতুন দাম নির্ধারণ করবে তাতে ভোক্তাদের নয়, ব্যবসায়ীদেরই স্বার্থ রক্ষা হবে। এখন ব্যবসায়ীরা বলছে দাম যৌক্তিক হয়নি, সেজন্য পুনর্বিবেচনা করতে বলছে। এটা হলে তো আইনের লঙ্ঘন হবে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা না হলে তারা আদালতে যেতে পারেন।’
দাম বেঁধে দেওয়ার পরেও কেন তা মানা হচ্ছে না? এর যুক্তিও তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ীরা। এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওমেরা ওমেরা এলপিজি গ্যাসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিইআরসি এলপিজির যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তা যৌক্তিক হয়নি। নির্ধারিত দামে উৎপাদন পর্যায়ে সিলিন্ডার প্রতি খরচ কম ধরা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে গেলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। তাই দাম পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।’
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করে গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বিইআরসির এ সিদ্ধান্তে জ্বালানি বিভাগ কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। আমরা এলপিজির নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নে মাঠে নামব। এজন্য মাঠ প্রশাসনের সহায়তায় নেওয়া হবে। পাশাপাশি এলপিজি খাতের জন্য একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর বিষয়েও কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন একদিকে রোজা, তার ওপরে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নে কাজ শুরু করব।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিইআরসি যে দাম নির্ধারণ করেছে তাতে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে বারো কেজির প্রতি সিলিন্ডার এলপিজির দাম ৫৯১ টাকা, বেসরকারি পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডার ৯৭৫ টাকা ও ৪৫ কেজির সিলিন্ডার ৩ হাজার ৬৫৯ টাকা। আর যানবাহনের জন্য প্রতি লিটারের দাম ৪৭ দশমিক ৯২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম