ভ্যাকসিন-চিকিৎসা সরঞ্জাম-অর্থনৈতিক সহযোগিতায় একমত ৬ দেশ
২৮ এপ্রিল ২০২১ ১৮:১৪
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চীনের উদ্যোগে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা একসঙ্গে কাজ করতে একমত পোষণ করেছে। এই ছয় দেশ চলমান করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় একসঙ্গে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সংরক্ষণাগার প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র বিমোচন ও সহযোগিতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং ই-কমার্স ফোরাম গঠন করা অন্যতম।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এই ছয় রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) এই ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরওয়াইস নাব, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গয়ালি, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাখদুম শাহ মাহমুদ কুরেশি ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিনেস গুনাওয়ারদেনা করোনা মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করার জন্য মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেন। চলমান করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা ও করোনা পরবর্তী ক্ষতি মোকাবিলা নিয়ে তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ে আলাপ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা করোনাভাইরাসকে মানবসভ্যতার বিপক্ষে একটি সাধারণ শত্রু হিসেবে অভিহিত করেন। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে বলে মত দেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ভাইরাস মোকাবিলায় বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও কারিগরি সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে তার দেশ।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনা বিষয়ক সহযোগিতা করার জন্য একমত পোষণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই ইস্যুটি রাজনীতিকরণের বিপক্ষে মত দেন। করোনার মিউটেশন ট্র্যাক করতে বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলো নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা শক্তিশালী করতেও সম্মত হন।
করোনা লড়াইয়ে ভ্যাকসিন অন্যতম প্রধান অস্ত্র বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে একমত প্রকাশ করে বলেন, করোনার ভ্যাকসিন সমতা ও ন্যায্যাতার ভিত্তিতে দেশগুলোর মধ্যে সরবরাহ করতে হবে। ভ্যাকসিন জাতীয়করণ করোনা প্রতিরোধকে বাধাগ্রস্ত করবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে ইমিউনিটি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
করোনা মোকাবিলায় চীনের উদ্যোগকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা স্বাগত জানান উল্লেখ করে যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, করোনা ভ্যাকসিন বিশ্ববাসীর কাছে সহজে পৌঁছে দিতে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং যে বিবৃতি দিয়েছেন, চীন তা বাস্তবায়ন করবে। তারা বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত সহজে ভ্যাকসিন সরবরাহ ও টিকা উৎপাদন বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
করোনার প্রভাবে টেকসই উন্নয়নে সবগুলো দেশই ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ট করার বিষয়ে একমত হন। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বাণিজ্য সচল রাখতে সীমান্ত উন্মুক্ত রাখা, শিল্প ও সরবরাহ বাণিজ্য (সাপ্লাই-চেইন) স্থিতিশীল ও নিরাপদ রাখা এবং মানুষের জীবন সহজ করতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সহযোগিতা করার বিষয়েও একমত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে সম্মত হয় চীন।
দুর্যোগের এই সময়ে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য নির্মূল, খাদ্য নিরাপত্তা এবং নন-ট্র্যাড্রিশনাল নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে বৈঠকে অংশ নেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জোর দেন। করোনা পরিস্থিতিতে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ‘হেলথ কোডস’ চালুর বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীন ঘোষণা দিয়েছে যে চীন-দক্ষিণ এশিয়া জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সংরক্ষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে, চীন-দক্ষিণ এশিয়া দারিদ্র্য বিমোচন ও সহযোগিতা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং প্রান্তিক পর্যায়ের উন্নয়নে চীন-দক্ষিণ এশিয়া ই-কমার্স ফোরাম গঠন করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চীনের এই উদ্যোগ চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে ব্যাপকভাবে, স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং টেকসই বাস্তবায়নে একমত হন।
ভারতের চলমান করোনা সংক্রমণের প্রতি নজর রাখার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে ভারতকে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এই ছয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একমত প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এই দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব ও মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠান এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর বিষয়ে একমত পোষণ করেন। এই ছয় দেশ এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোকেও এই ফোরামে যোগ দেওয়ার বিষয়ে স্বাগত জানায় বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর