ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সে ‘আটকে আছে’ গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন
২৮ এপ্রিল ২০২১ ২২:৫৮
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত বছর থেকেই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে কাজ করে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ওই সময়ই দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকও ঘোষণা দিয়েছিল ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের। এরপর একে একে বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে সাতটি ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমোদন মিললেও গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন এখনো মানব শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে পারেনি।
জানা গেছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর আগে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) থেকে যে ‘ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স’ প্রয়োজন হয়, সেটি এখনো পায়নি গ্লোব বায়োটেক। এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের গবেষণা প্রক্রিয়ায় অ্যানিমেল ট্রায়াল তথা প্রাণীদেহে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে না পারার কারণেই সেই অনুমতি এখনো আটকে রয়েছে।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশন বিভাগের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, গত বছরের ৮ মার্চ আমাদের ভ্যাকসিন প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়। ওই বছরের ২ জুলাই গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়। এরপর যথাযথ গবেষণা প্রক্রিয়া শেষে গত ৫ অক্টোবর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানাই যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আমরা প্রস্তুত।
তবে এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর অনুমতি বিএমআরসি দেয়নি গ্লোব বায়োটেককে। ড. মহিউদ্দিন বলেন, এ বছরের ১৭ জানুয়ারি ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য বিএমআরসি’তে গ্লোব বায়োটেক ভ্যাকসিনের প্রটোকল জমা দেওয়া হয়। বিএমআরসি গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে শতাধিক কোয়েরি (প্রশ্ন) দেয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি যথাযথভাবে সেসব কোয়েরির জবাব দেওয়া হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের বিষয়ে বিএমআরসি থেকে কোনো জবাব পাইনি।
কী কারণে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়নি, এ বিষয়ে বিএমআরসি থেকে কিছু জানানো হয়েছে কি না— জানতে চাই ড. মহিউদ্দিনের কাছে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে শুনেছি— বিএমআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমাদের ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়া যাচ্ছে না। আরও শুনেছি যে এখন দেশে যে ভ্যাকসিন কর্মসূচি চলছে, তাতে আমাদের ভ্যকসিনের অনুমতি দিলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের আশঙ্কা আছে। এসব কারণেই নাকি আমাদের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া যাচ্ছে না।
ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএমআরসি’তে কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকার কথা না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠক অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিন অবশ্যই অভিনন্দন পাওয়ার মতো কাজ। কিন্তু বিষয়টি শতভাগ বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে হতে হবে। এই ভ্যাকসিনের ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা বলা হচ্ছে, গাইডলাইন অনুযায়ী তার সুযোগ নেই। বিএমআরসি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিএমআরসি’র অধ্যাদেশ অনুযায়ী ন্যাশনাল ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স কমিটি কোনো আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অধীনে না। তাই এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল গাইডলাইন অনুযায়ী আবেদনের তিন মাসের মধ্যে ফলাফল জানানোর কথা। তাদের কোয়েরি দেওয়ার পর গ্লোবের পক্ষ থেকে সেগুলোর জবাব দেওয়ার পরও নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পেরিয়ে গেছে। তাই গ্লোব বায়োটেককে আবার সক্রিয়ভাবে বিএমআরসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে মূল কারণটি জানতে হবে।
এ প্রসঙ্গে একুশে পদকপ্রাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, আমি যতদূর জানি, গ্লোব বায়োটেক অ্যানিমেলের ওপর তাদের গবেষণাটি প্রয়োগ করেনি। আর বিএমআরসি অ্যানিমেল বডিতে এর প্রভাব কমফার্ম না হয়ে সরাসরি মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিতে চাচ্ছে না। মর্ডানা, ফাইজার বা বিদেশের ভ্যাকসিনগুলো শিপ্পাঞ্জি, বানরসহ একাধিক অ্যানিমেলের ওপর ট্রায়াল দিয়েছে।
গ্লোব বায়োটেক অ্যানিমেল ট্রায়াল করে থাকলে তাদের যথাযথ কাগজপত্র নিয়ে আবার বিএমআরসি’তে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি, তাদের কোথাও একটু খুঁত রয়ে গেছে। তাই অনুমতি দিচ্ছে না। আর দেশের ভ্যাকসিনকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রীও তাই চান। কেননা আমরা গরীব দেশ। নিজস্ব ভ্যাকসিন থাকলে তা দিয়ে আমরা দেশের চাহিদা মেটাব এবং বিদেশেও রফতানি করব।
এদিকে, বিএমআরসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী গত ২৫ এপ্রিল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই গ্লোব বায়োটেক ভ্যাকসিনের ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর
ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স করোনা ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল গ্লোব বায়োটেক বিএমআরসি