‘বাজেটে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে’
২৯ এপ্রিল ২০২১ ১৮:২৩
ঢাকা: আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি মোকাবিলায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসঙ্গে কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতের দিকে বিশেষ নিজর দেওয়ার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বাজেট সুপারিশমালা সংক্রান্ত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব সুপারিশ তুলে ধরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। প্রতি বছরের মতো এবারও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে সিপিডি ভার্চুয়ালি এই আয়োজন করে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন- সিপিডির সিনিয়র ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এতে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান।
সিপিডি‘র সুপারিশমালায়, আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ধনীদের আয়কার বাড়ানো এবং ইন্টারনেটের সম্পূরক শুল্ক ও সোর্স ট্যাক্স প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাজেটে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি ও শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে বাজেটের অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রি-অ্যাডজাস্টমেন্ট, রিকোভারি এবং রিফর্ম।
সিপিডি‘র সুপারিশমালা বলা হয়, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা যেন অবাস্তব না হয়। কর আহরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ব্যক্তি খাতে বিশেষ করে ধনীদের ওপর কর আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এই সম্পদ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে বিতরণ করতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন সরঞ্জামের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কর কমাতে হবে। মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সারজার্জ প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়াও কৃষি খাতে আরও বেশি প্রণোদনা দিতে হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তাদের একটা তালিকা করে তাদের আরও বেশি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেওয়ার কথাও বলছে সিপিডি।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঝুঁকিগুলোকে সামাল দিতে হবে। এখন প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মেগা প্রকল্পে নজর না দিয়ে কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিতে হবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছঢ মাসে ৮.৬ শতাংশ প্রবদ্ধি হয়েছে, এটা ভালো দিক।’
কালো টাকা সাদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলতি বাজেটে ১০/১২ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। এই সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কারণে অন্য খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। কোভিডের আগে দারিদ্র লোকের সংখ্যা ২০ শতাংশ থাকলেও বর্তমানে তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই ধরনের লোকদের ৮ হাজার টাকা করে দিলে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে। এটি জিডিপির এক শতাংশ। আগামী বাজেটে কর আহরণ এবং কর ফাঁকিরোধে নজর দিতে হবে।’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। প্রশ্ন হলো এই সব প্রকল্প থেকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ঠিকমতো সহায়তা পাচ্ছেন কিনা। আগামী দুই বছরের জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কাছে বছরে ২/৩ বার করে হলে দুই হাজার করে টাকা দিলেও তাদের কিছুটা সহায়ক হবে।’
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “স্বাস্থ্যখাতের এখনো বরাদ্দ জিডিপি‘র এক শতাংশের কম। গত অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেটে জিডিপির ০.৯ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অল্প বরাদ্দ দিয়ে কিভাবে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সম্ভব। তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা খাতেও বরাদ্দ দিতে হবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হলেও যদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে, মানুষের আয় না বাড়ে, দারিদ্র যদি বেড়ে যায়, সামঞ্জস্য যদি না থাকে তাহলে এই ধরনের জিডিপি‘র প্রবৃদ্ধি দিয়ে কি হবে?’
মূল প্রতিবেদনে তৌফিক ইসলাম বলেন, ‘ধনীদের আয়কর গত বছর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এটাকে আবার ৩০ শতাংশ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। বিভিন্ন দেশ এখন এটা করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ধনীদের কর হার বাড়িয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটের ব্যবহার এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুধু ধনীরা নয় এখন অনেক সাধারণ মানুষকে শিক্ষার কাজে বা অন্য কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাই আমরা সুপারিশ করছি সম্পূরক শুল্ক যে ১৫ শতাংশ আছে তা প্রত্যাহার করা। সেই সঙ্গে ১ শতাংশ যে সোর্স ট্যাক্স রাখা হয়েছে তাও প্রত্যাহার করা। এখন শুধুমাত্র যে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে সেটাকে রেখে, এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
সারাবাংলা/জিএস/এমও