১ মে থেকে কাপ্তাই লেকে মাছ শিকার বন্ধ
২৯ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৪০
রাঙ্গামাটি: প্রতিবছরের মতো এবারও ১ মে (শনিবার) থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস সব ধরনের মাছ শিকার, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটির এই লেকে কার্পজাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতে এই নিষেধাজ্ঞা।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধির লক্ষে প্রতিবছরের মতোই এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২০ হাজার জেলেকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সহায়তা দেওয়া হবে।’
এছাড়া অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নৌ-পুলিশ মোতায়েন করা হবে। হ্রদে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে প্রতিবছর কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এসময় হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে পোনা অবমুক্ত করে থাকে বিএফডিসি। এবছরও হ্রদে কার্পজাতীয় পোনা অবমুক্ত করা হবে।’
বিএফডিসি রাঙ্গামাটি কেন্দ্রের বিপণণ কর্মকর্তা শোয়েব সালেহীন বলেন, ‘বিগত কয়েক অর্থবছরের চেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে কাপ্তাই হ্রদের মাছ আহরণ রেকর্ড হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত শুরুর দিকে স্বল্প পানিতে মাছ আহরণ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে মাত্রাতিরিক্ত মাছ আহরিত হওয়ায় শেষের দিকে এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৫৬ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬২ সালে বাঁধ নির্মাণ শেষে রাঙ্গামাটির বিশাল এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ। এই হ্রদই বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়সমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ। আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। যা বাংলাদেশের পুকুরসমূহের মোট জলাশয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ মোট জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ।
১৯৬১ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে এ হ্রদের সৃষ্টি হলেও এটি রাঙ্গামাটিতে মৎস্য উৎপাদন ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। এ হ্রদের মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে প্রায় ২২ হাজার জেলে।
সারাবাংলা/এমও