স্বাস্থ্য খাতকে অবহেলা করার ফল পেয়েছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
২৯ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৩৮
ঢাকা: স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তারই ফল মিলছে বলে মনে করছেন তিনি। আর কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোনো দেশই স্বাস্থ্য খাতকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি বলে মন্তব্য তার।
মন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিইনি, অবহেলা করেছি। এর ফলাফল আমরা করোনায় পেয়েছি। করোনা মহামারিতে আমরা কতটা অসহায়, সেটা দেখেছি। শুধু আমরাই নই, পৃথিবীর কোনো দেশই স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেয়নি। অথচ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহিদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক আলোচনা তিনি এসব কথা বলেন। বিএসএমএমইউয়ের ২৪তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে অনলাইনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বাজেট জিডিপির মাত্র ০.৯ শতাংশ। আমরা একে ৯ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য আমাদের আরও বেশি এগিয়ে আসা দরকার। করোনা আমাদের দেখিয়েছে— স্বাস্থ্যসেবায় বিপর্যয় ঘটলে মানুষের কী অবস্থা হয়। দেশের সব উন্নয়ন থেমে যায়, দেশে শান্তি থাকে না, সামাজিক অশান্তি দেখা দেয়। এ থেকেই স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব আমাদের অনুধাবন করা উচিত।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ আমরা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সামলে নিয়েছিলাম। কিন্তু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যখন সংক্রমণ-মৃত্যু অনেক কমে এলো, মানুষ তখন ভেবেছিল করোনা চলে গেছে। মানুষ বেড়াতে গিয়েছে, বিয়ে-পিকনিকসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান করেছে। আর সে কারণেই দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। এখন দিনে প্রায় শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তবে সরকার সময়মতো ‘লকডাউন’ ঘোষণা করায় এর প্রভাব শিগগিরই কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ সম্পর্কে সচেতন না হলে সামনে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউ চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, তখন অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ কারণে করোনার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে সবার ইমিউনিটি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, আমরা শুরুতে খুব ভালোভাবেই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভারত ভ্যাকসিন বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের থেমে যেতে হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছি, যেন আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারি। এছাড়া কেউ যদি দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে চায়, সে সুযোগও আমরা দিচ্ছি। আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আমরা চাই তারা ভ্যাকসিন বানিয়ে আমাদের দেশের মানুষকেও দিক এবং দেশের বাইরেও রফতানি করুক।
বিএসএমএমইউয়ের উত্তরোত্তর অগ্রগতি কামনা করে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের স্বাস্থ্যশিক্ষা ও চিকিৎসা গবেষণায় অন্যতম এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে চিকিৎসাবিজ্ঞানের শির্ক্ষাথীরা উচ্চতর ডিগ্রি নেন, চিকিৎসা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা হয় এখানে। আমরা এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্বিত। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা আরও উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে যাক। যত সাহায্য-সহযোগিতা লাগে, আমরা করব।
২৪তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর