Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঋণদাতা এনজিও সেজে চা শ্রমিকদের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে উধাও

হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ এপ্রিল ২০২১ ১১:২৭

কথিত এনজিও’র কর্ণধার জেমস জেমারাক

মৌলভীবাজার: এনজিও হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে শ্রীমঙ্গল উপজেলার দরিদ্র অসহায় ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর চা শ্রমিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহক বানিয়েছিল ‘আদিবাসী উন্নয়ন সংগঠন’। এসব চা শ্রমিকদের উপার্জন সামান্য। প্রয়োজনে ঋণ লাগতে পারে— এমন চিন্তা থেকে সেই সামান্য আয়ের একটি অংশই তারা সঞ্চয় করেছিলেন এই বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও)। এরপর যখন ঋণ দেওয়ার সময় হলো, তখনই উধাও ‘আদিবাসী উন্নয়ন সংগঠনে’র প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা। মোবাইল ফোনও সবার বন্ধ। সঞ্চয় হারিয়ে সামান্য আয়ের প্রান্তিক এই চা শ্রমিকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট, কালীঘাট, জাম্বুড়াছড়া, আমরাইল চা বাগান, হুগলিয়া ছড়া, হাতিমারা, ১৬ নম্বর বস্তি এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এই প্রতারক এনজিও। এর মধ্যে গান্ধিছড়া এলাকার ৬৫ জন, আমরাইলছড়া চা বাগান এলাকার ২০ জন, জাম্বুড়াছড়া এলাকায় ৪২ জন, হুগলিয়াছড়া এলাকার ৪৫ জন, হাতিমারা এলাকার ৬৫ জন, রাজঘাট চা বাগান এলাকার ৭২ জন, ১৬ নম্বর বস্তি এলাকার ৪২ জন ছাড়াও আরও কয়েকজন গ্রাহক হয়েছিলেন প্রতারক এই এনজিওতে। তাদের কাছ থেকে প্রায় সাত লাখ টাকা সঞ্চয় আদায় করে সংস্থাটি। সে হিসাবে একেকজন গ্রাহকের সঞ্চয়ের পরিমাণ টাকার অঙ্কে খুব বেশি না হলেও একশ টাকা মজুরি পাওয়া চা শ্রমিকদের কাছে এই সঞ্চয়ই পাহাড় সমান। আর এই সঞ্চয়ের বিপরীতে ঋণ নিতে গিয়েই তারা দেখতে পান, সংস্থার অফিস বন্ধ।

জানা গেছে, কথিত এই এনজিও’র কর্ণধার জেমস জেমারাক নামে এক ব্যক্তি। একবছর আগে শ্রীমঙ্গল শহরের বিরতি হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে ১২ জন মাঠকর্মী নিয়োগ করে কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। উপজেলার হতদরিদ্র চা শ্রমিকদের বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য করে। ঋণ দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় সঞ্চয়। চা শ্রমিকেরা তাদের সামান্য আয় থেকেও সঞ্চয় করেন এই সংস্থায়।

জানা গেছে, কেবল গ্রাহকের টাকাই নয়, এই সংস্থায় কর্মরত স্থানীয় মাঠকর্মীদেরও ঋণ দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের সঞ্চয় আদায় করেন জেসম জেমারক। এরপর একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে অফিসে তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়েন তিনি। এতে এই সংস্থায় কর্মরত মাঠকর্মীরাও পড়েছেন বিপাকে। একদিকে চাকরি নেই, অন্যদিকে গ্রাহকদের চাপে এখন তারা পালিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। জেমস জেমারাকসহ সংশ্লিষ্ট বাকিরা মোবাইল বন্ধ রাখায় তাদের সঙ্গে যোাগাযোগের কোনো উপায়ও পাচ্ছেন না সঞ্চয় হারানো শ্রমিকরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) কথিত এই এনজিও’র কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। গান্ধিছড়া এলাকার হতদরিদ্র সন্তুষ চাষা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছে থেকে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে। কিন্তু ঋণ চাইতে গেলে নানা বাহানা দেখিয়েছে। এখন আমাকে ঋণ নেওয়ার জন্য আসতে বলেছে। এসে দেখি আমার মতো আরও অনেককেই আসতে বলেছিল। কিন্তু অফিসই তালাবদ্ধ।’

একই এলাকার পঞ্চমী তংলা, পুতুল দাশ, মাধুরী দাশ, শিমা গোয়ালাসহ অন্যরাও একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা এখন তাদের সঞ্চয় ফিরে চান। আর প্রতারক জেমসসহ তার সহযোগীদের বিচার দাবি করছেন।

কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না— জানতে চাইলে প্রান্তিক পর্যায়ের এই মানুষগুলো বলছেন, কেউ সহযোগিতা না করলে তাদের পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না। কোনো আইনজীবীকে পারিশ্রমিক দেওয়ার মতো অবস্থাও তাদের নেই। এ বিষয়ে সরকারি ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিঃশর্ত সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো এনজিও আছে বলে আমার জানা নেই। ঋণ দেওয়ার নাম করে সঞ্চয় হাতিয়ে নিয়েছে— এমন কোনো খবরও আমার কাছে আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।’

জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোয়েব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই সংগঠনের ঋণ দেওয়ার কোনো অনুমোদন নেই। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। শিগগিরই এর বিহিত আমরা করব। আমার পরামর্শ থাকবে, ভালো করে খোঁজখবর না নিয়ে কোনো সংস্থার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে যাবেন না।’

ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সোয়েব চৌধুরী বলেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য কী করা যায়, আমরা দেখব। অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করা এই সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলব আমি। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব।’

সারাবাংলা/টিআর

আদিবাসী উন্নয়ন সংগঠন ঋণদাতা এনজিও চা শ্রমিক সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে উধাও


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর