ডিএসসিসি’র অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ধীর গতি
৩০ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৪৬
ঢাকা: ধীর গতি বিরাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পে। প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি ৬৪ শতাংশ। অথচ আগামী জুনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে মেয়াদ। এমন প্রেক্ষাপটে এক বছর সময় বাড়াতে হচ্ছে।
গত ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। গত ১ এপ্রিল জারি করা ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
হেলালুদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা) বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ১ হাজার ২০২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৮ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন মোট ১ হাজার ২১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রকল্পের প্রথম সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করে। পরবর্তীতে ১ হাজার ৭১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর একনেকে অনুমোদিত হয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক, ফুটপাত, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সড়কে পরিবেশ বান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি বাতি স্থাপন, মিডিয়ান বিউটিফিকেশন, পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির হালনাগাদ অগ্রগতি অবহিতকরণএবং প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ২০২২ সালের জুন অর্থাৎ এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব আলোচনার জন্য প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভা ডাকা হয়েছে।
সভায় প্রকল্পটি ২ বার সংশোধন হওয়ার পরও মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী বিভিন্ন অর্থবছরের যথাযথ অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া, প্রাথমিক অবস্থায় ডিএসসিসির আর্থিক সংকট থাকায় প্রকল্পের অনুকুলে ডিএসসিসির নিজস্ব তহবিল হতে কোন অর্থ ব্যয় সম্ভব না হওয়া, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে কাজ বাস্তবায়নকালে বাস্তবসম্মত ও আধুনিক মানের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কাজের নকশা ডিজাইন সংশোধন করার ফলে প্রকল্প ব্যয় কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়া, ধুপখোলা শিশুপার্ক নির্মাণ কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রণীত ড্রইং অনুযায়ী বাস্তবায়নকালে মাঠ পর্যায়ে এলাকাবাসী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পরামর্শ মোতাবেক মাঠ উন্নয়ন কাজ অন্তর্ভুক্ত করে ড্রইং ডিজাইন পরিবর্তন প্রাক্কলন সংশোধন এবং জমি বুঝে না পাওয়ায় কাজটি শুরু করতে দেরি হয়।
পরবর্তীতে শিশুপার্কের পরিবর্তে মাঠ উন্নয়নসহ ক্ষুদ্র পরিসরে শিশুপার্ক নির্মাণের বিষয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ড্রইং ডিজইিন চূড়ান্ত করে, সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের পর কাজ শুরু করাতে কিছুটা সময় লাগছে। এ ছাড়া গণকটুলীতে ৬টি ক্লিনার কলোনি ভবন নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে বসবাসরত ক্লিনারদের অপসারণ অন্যত্র স্থানান্তর বিলম্ব হওয়ায় যথাসময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়াও ২০২০ সালে বছরব্যাপী করোনা মহামারির কারণে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের আওতায় যাবতীয় কার্যাবলির মধ্যে নগর ভবন সংস্কা কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ আরম্ভ হবে। তবে ধানমন্ডি লেকের সংস্কা কাজ এখন আরাম্ভ করা যায়নি। এছাড়া অন্যান্য কাজের অগ্রগতি ভালো।
চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি ৬৪ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৯৮৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা (৫৭ দশমিক ১৮ শতাংশ)। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে এই সময়েই প্রকল্পের সবগুলো কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) বলেন, মন্ত্রী ধানমন্ডি লেক পরিদর্শন করেছেন, তার নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুযায়ী যাতে সকল কাজ বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় অংশ নিয়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধি প্রকল্পের আওতায় গণকটুলীতে পুরাতন জরার্জীর্ণ ভবনে বসবাসরত ক্লিনারদের অন্যস্থানে স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চান। এর জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘গণকটুলীতে পুরাতন জরার্জীর্ণ ভবনে বসবাসরত ক্লিনারদের অন্যস্থানে স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং এখানে ৬টি ক্লিনার ভবন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮৫ শতাংশ।’
পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব যৌক্তিক বলেই বিবেচিত হচ্ছে তাই প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন এবং সমাপ্তির জন্য প্রকল্পের মেয়াদ এক বৎসর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করা যেতে পারে।’
সারাবাংলা/জেজে/একে