দুর্গত মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ, অন্যরা কোথায়?
২ মে ২০২১ ১৩:৩১
ঢাকা: সবসময় যে কোনো দুর্যোগ সংকটে দুর্গত মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে থাকতে সবসময় দুর্যোগ দুর্বিপাকে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যেত মানুষের পাশে। এটিই বিরোধী দলের কাজ। কিন্তু যারা নিজেদেরকে বিরোধী দল বা প্রতিদিন সরকার উৎখাতের জন্য বক্ততা-বিবৃতি দিয়ে, আন্দোলনের নামে পোড়াও-জ্বালাও করে যাচ্ছেন, দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা?’
রোববার (২ মে) দুপুরে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র অসহায় মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম উদ্বোধনে তিনি এ কথা বলেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সারা দেশের ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবে। রোববার (২ মে) উপকারভোগীদের হাতে প্রধানমন্ত্রী এ উপহার পৌঁছে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে ভোলা, জয়পুরহাট এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রান্তে যুক্ত হয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ৩৬ লাখ ৫০ হাজার অসহায় মানুষকে জীবন ও জীবিকার জন্য আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এ জন্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিওরক্যাশের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর মাধ্যমে জিটুপি (গভর্নমেন্ট টু পার্সন) ভিত্তিতে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাবে প্রত্যেক পরিবার।
দুর্যোগ দুর্বিপাকে সংকটে দেশের মানুষের পাশে দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায়। আামদের সকলের চেষ্টা হচ্ছে কিভাবে আমরা এই দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াব এবং সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
‘আমি জানি, এই সময় সারাবিশ্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। যখন সারাবিশ্ব করোনা আক্রান্ত তখন খুব স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, রফতানি সবকিছুতেই একটা ভাটা পড়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নত দেশই হিমশিম খাছে। সেখানে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমাদের ছোট ভূখণ্ডে আমাদের অধিক জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যাকে একদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়া, অপরদিকে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা, তাদের জীবনকে সচল রাখার ব্যবস্থা, সেটা কিভাবে করা যায়, আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি এবং সে কারণেই আমরা এই অসহায় বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
১৯৭২ সালে ২০ ফ্রেবুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ভাষণে বলেছিলেন। আমাদের এমন একটা সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যে সমাজে কৃষকরা… ক্ষুধার্ত জনগণ আবার হাসতে পারবে। অর্থ্যাৎ এ কৃষক শ্রমিক বঞ্চিত মানুষ তাদের ভাগ্য গড়া এটিই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেটাই তিনি করতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আমরা সেই জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। আমরা সবসময় এটিই চাই মানুষকে কিভাবে সহযোগিতা করব। মানুষের পাশে দাঁড়াব এবং জাতির পিতা যেভাবে কাজ করতেন, আমরা সেটাই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি।’
জাতির পিতার আদর্শ-নীতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা আওয়ামী লীগ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। তবে এখানে আমি একটা কথা না বলে পারি না। আমি এত টাকা-পয়সার হিসাব দেব না। ওটা আমাদের মুখ্যসচিব তুলে ধরেছেন। আমরা একটা জিনিস লক্ষ করি। সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে কিন্তু আওয়ামী লীগ আছে। আপনারা দেখেছেন ধান কাটার অসুবিধা, আমরা ছাত্রলীগকে বলার সঙ্গে সঙ্গে নেমে গেছে। কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ প্রত্যেকেই কিন্তু এই করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
‘চিকিৎসার জন্য অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া। লাশ দাফন করা অথবা মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া। ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দেওয়া, সব কাজে কে আছেন এখন? আওয়ামী লীগ আছে আমাদের সহযোগী সংগঠনের কর্মীরাই আছে। আপনারা নিজেরাই এখন বিবেচনা করে দেখেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছে, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ; প্রত্যেকেই কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর অন্যান্য কয়েকটা রাজনৈতিক দল। অনেকেই ভালো শক্তিশালি বিরোধী দল চায়। আমরাও তো বিরোধীদলে ছিলাম। আমরা বিরোধী দলে থাকতে সবসময় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যেত মানুষের পাশে। এটাই বিরোধীদলের কাজ। কিন্তু আজকে যারা নিজেদেরকে বিরোধী দল বা প্রতিদিন সরকার উৎখাতের জন্য বক্ততা-বিবৃতি আন্দোলনের নামে পোড়াও-জ্বালাও করে যাচ্ছে। দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা?’
‘কয়টা দুর্গত মানুষের মুখে তারা খাবার তুলে দিয়েছে? কয়টা মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে? কয়টা মরা মানুষের কাফনের কাপড় কিনে দিয়েছে। কেউ নেই? হ্যাঁ, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। একটা মাত্র টেলিভিশন ছিল। বেসরকারি খাতে প্রচুর টেলিভিশন রেডিও করে দিয়েছি। কয়েকটি মাত্র পত্রিকা ছিল, বেসরকারিখাতে অনেক পত্রিকা হয়ে গেছে। এখন তারা বেশ ঘরে বসে বিবৃতিই দিয়ে যাচ্ছেন।’
‘আর আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে। যখন তাদের বুদ্ধি খোলে এবং পরামর্শ দেয় তার আগেই কিন্তু আমাদের সরকার আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে নেন। গরিবের কি দিতে হবে, মানুষের জন্য কি করতে হবে? করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে হবে কি না বা মানুষকে কীভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে হবে; এই সব কাজ যখন আমরা গুছিয়ে-টুছিয়ে নিয়ে আসি বা বাজেট আমাদের কীভাবে করব, বাজেটের কোন কোন খাতের ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দেব, এগুলো যখন আমাদের করা শেষ হয়ে যায়? তখন তাদের বুদ্ধির দুয়ারটা খোলে এবং তারা আমাদের যে কাজগুলো সেগুলি আবার তারা আমাদেরকে পরামর্শ দেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, তারা বুদ্ধিজীবী। তারা তো বুদ্ধি বেঁচেই জীবন-যাপন করবেন। কাজেই সেই জন্য তাদের পরামর্শের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। তবে আমি বলতে চাই তাদের এই পরামর্শ দেওয়ার আগে আমাদের এই কাজগুলি আমরা কিন্তু করে ফেলি।’
‘কারণ এই দেশটি আমাদের। এই দেশটা আমার স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন এবং রাজনীতি আমাদের জনগণের জন্য। জনগণের কল্যাণের জন্য। এই কথাটা কখনও আমরা ভুলি না। আর সেই কথাটা ভুলি না বলেই আজকে মানুষের জন্য কাজ করাটাকেই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলেই আমরা মনে করি এবং সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’
অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দল বা যারাই আছেন, প্রতিদিন কীভাবে সরকার উৎখাত করবেন। সেই চিন্তাভাবনা করেন তাদেরকে এটি করতে হলে বা শক্তিশালি বিরোধী দল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের বিশ্বাস আস্থা অর্জন করতে হবে। ৭৫’র জাতিকে পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর, জাতীয় নেতাদের হত্যার পর তারা ভেবেছিল আওয়ামী লীগ কোনোদিন আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অপরাধ কি ছিল, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, এটাই তো অপরাধ ছিল।’ কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরেই এদেশের মানুষ সেবা পাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশের মানুষ যদি কিছু পেয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই পেয়েছে। এই দেশটাকে কীভাবে উন্নত করতে হবে, এটা আওয়ামী লীগ জানে। আওয়ামী লীগই করে যাচ্ছে। কারণ আওয়ামী লীগ তো জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এই আওয়ামী লীগই করেছে এবং স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ। সে জন্য আমাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে, দায়বোধ আছে। আর আমাদের রাজনৈতিক ফিলোসপিটাও তাই। মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।’
কাজেই একেবারে প্রতিটি এলাকায় আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলে অবহিত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর যারা বলেন, সরকার এটি করে নাই, ওটা করেনি সমালোচনা করছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন নিজে কটা লোককে সাহায্য করেছেন? তার একটি হিসাব পত্রিকায় দিয়ে দেন। তাহলে মানুষের আস্থা পাবেন, বিশ্বাস পাবেন। সেটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’
বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের বিশেষ করে বিত্তশালী আছেন, তাদেরকে বলব, জনগণের পাশে দাঁড়ান। জনগণকে সাহায্য দেন, জনগণের জন্য কাজ করেন।’
সারাবাংলা/এনআর/একে
করোনা করোনা কোভিড ১৯ নভেল করোনাভাইরাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা