Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জামায়াত-হেফাজতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ মে ২০২১ ২০:১৯

শহীদ জননী হাজানারা ইমাম যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবীর অনুপ্রেরণায়

ঢাকা: ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ৯২তম জন্মবার্ষিকীর আয়োজন থেকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। আন্তর্জাতিক এক ওয়েবিনারে তারা বলেনম জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে প্রতিহত করতে হবে। মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষ জামায়াত-হেফাজতের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নির্মূল করা যাবে না।

সোমবার (৩ মে) আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

বিজ্ঞাপন

শাহরিয়ার কবির তার সূচনা বক্তব্যে ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব বানচালের উদ্দেশ্যে হেফাজত-জামায়াতের দেশব্যাপী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে— জাহানারা ইমামের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার নাগরিক আন্দোলন এখনো কতটা জরুরি। দেরিতে হলেও সরকার বর্তমানে হেফাজতের জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। সরকারের এই অবস্থান অভিনন্দনযোগ্য।’

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শহিদ জননী জাহানারা ইমামের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন আমাদেরকে সবসময় উজ্জ্বীবিত করে। আমরা যখন কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করছি, তখন কওমি মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের জাতিবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নারীবিদ্বেষী গুজবের কারখানা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চূড়ান্ত অপব্যবহার করছে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা একমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাব্যবস্থার চিন্তা দেখতে পাই। কিন্তু সেই শিক্ষাভাবনা নিয়ে আমরা আর এগুতে পারিনি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, নতুন যে কারিকুলাম হচ্ছে তার ভিত্তি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু। এই মুহূর্তে একবারে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয়। কিন্তু সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি, একটি দেশের মধ্যে যেন দু’টো জাতি গড়ে না ওঠে। যে মূল্যবোধের কারণে বাঙালি হিসেবে আমরা গর্ব করি— অসাম্প্রদায়িক মানবিকতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমরা শিক্ষা আইন ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন করছি।

এসময় শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, সব মাদরাসায় একই পাঠ্যসূচি প্রচলন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-চেতনা, জাতির পিতার জীবনী, বাংলাদেশের সংবিধান, বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য পাঠ, জাতীয় সংগীত গাওয়া ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন সব মাদরাসায় বাধ্যতামূলক করতে হবে।

নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহিদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, জামায়াত-হেফাজতের একমাত্র উদ্দেশ্য ক্ষমতায় যাওয়া ও বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। হাটহাজারী মাদরাসাসহ বিভিন্ন কওমি মাদরাসায় বিপুলসংখ্যক জঙ্গিরা এজন্য প্রস্তুত আছে বলে আমরা জানি। কিন্তু তারা ৩০ লাখ শহিদ ও প্রায় সোয়া ৪ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে আমরা তা মেনে নেব না। তিনি বর্তমানে দেশের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়টির নাম ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ রাখার প্রস্তাব করেন।

নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম বলেন, মাদরাসার শিক্ষা সরকারের সুবিধাপুষ্ট, কিন্তু তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। তারা কী পড়াচ্ছে, কী শেখাচ্ছে, তা আমরা জানি না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের জন্য এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা মৌলবাদের একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরে আর ফিরে তাকানোর সময় পাব না।

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, হেফাজত প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক দল। সুযোগ পেলেই তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাদের বিশাল কর্মীবাহিনী আছে। এই কর্মীবাহিনীরা হচ্ছে মাদরাসার ছাত্র, যাদের লেখাপড়া করার কথা। কিন্তু লেখাপড়ার বাইরে গিয়ে কওমি মাদরাসায় তারা ধর্মান্ধ, মৌলবাদী হিসেবে গড়ে ওঠে। এজন্য আমরাই দায়ী। অনেক মা-বাবা দরিদ্র্যের কারণে তাদের মাদরাসায় ভর্তি করে দিচ্ছে। তাদের সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা আমরা করে দিতে পারছি না। মা-বাবাকে যেন মাদরাসায় সন্তানকে পাঠাতে না হয়, সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ‘দালাল আইন’ বাতিল করার পর শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির বিষয়ে আমারা কোরআন, হাদিসের বিধিবিধান প্রচার করেছি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। কুরআন অনুযায়ী ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামটি পরিপন্থি। কওমি মাদরাসায় শিক্ষক-ছাত্রের বৈষম্য প্রকট। মানবতার শিক্ষা, দেশপ্রেমের শিক্ষা দেওয়া হয় না। জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে কোনো মাদরাসায় এখন পর্যন্ত একটি চিঠিও যায়নি!

অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা হাসান রফিক, নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী জাগরণ-এর যুগ্ম সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাজ্যের মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদউল্লা, নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি মানবাধিকারকর্মী একরাম চৌধুরী, নির্মূল কমিটির ফিনল্যান্ড শাখার আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ ড. মুজিবুর দফতরী ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

সভার অন্যান্য বক্তা নতুন শিক্ষানীতিতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাভিত্তিক পাঠক্রম বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি জামায়াতে ইসলামী জাহানারা ইমাম শহিদ জননী হেফাজতে ইসলাম

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর