Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জিডিপি নয়, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ মে ২০২১ ২০:১৭

ঢাকা: আসন্ন বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তথা জিডিপির হিসাবের তুলনায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এছাড়া ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা ও কর্মসংস্থানমুখী বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

অর্থনীতিবিদদের আলোচনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও তা যথাযথভাবে ব্যয় করা, ভোক্তার চাহিদা ধরে রাখা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনকে গুরুত্ব দেওয়া, অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে গতিশীল করা এবং দেশের বেশিরভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা, কর কাঠামোর ব্যাপক সংস্কার, করহার কমানো, ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপ করার প্রস্তাবও উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৪ মে) বিকেলে এক বাজেট আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা এসব বিষয় তুলে ধরেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সহযোগিতায় আলোচনার আয়োজন করে হিসাববিদদের প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)।

‘সামষ্টিক অর্থনীতি: ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রত্যাশা’ শীর্ষক ওই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। আইসিএবি’র প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরুর সভাপতিত্বে এতে অর্থনীতিবিদ, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী নেতারা আগামী বাজেট নিয়ে তাদের প্রত্যাশা তুলে ধরেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতা ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান ভোক্তার ব্যয় বা ভোগ ব্যয় ধরে রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভোগ পড়ে গেলে উৎপাদন কমে যাবে। ফলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এজন্য ভোগ ব্যয়কে উৎসাহিত করতে বাজেটে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

বিজ্ঞাপন

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আগামী বাজেটে করোনা ভ্যাকসিনকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। এ লক্ষ্যে বাজেটে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেন তিনি।

প্রথম দিন থেকেই এই বরাদ্দ বাস্তবায়ন করা যায় উল্লেখ করে ড. মনসুর বলেন, করোনার ভ্যাকসিন যতদিন পর্যন্ত না সবাই পাবে, ততদিন একের পর এক ঢেউ আসতেই থাকবে। এছাড়া বাজেটে ঘাটতি সাত থেকে আট শতাংশ করা, আদায়যোগ্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা, প্রণোদনায় এসএমই খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কালো টাকার সুযোগ দেওয়ায় ১২ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে আসছে। কিন্তু এর ফলে নিরুৎসাহিত হয়ে কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, তা হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বাজেট বিশেষত স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো, বিদেশি সহায়তা কাজে লাগানো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিভিন্ন বিভাগের সংস্কার কার্যক্রমকে দ্রুততর করা, পরোক্ষ করের চেয়ে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান আগামী তিন বছরে কোম্পানির কর হার ধাপে ধাপে সাড়ে সাত শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, এটি কমানোর পর যে কর হার হবে, তাও বৈশ্বিক গড় করপোরেট হারের তুলনায় বেশি।

কালো টাকা বিনিয়োগের বিদ্যমান বৈষম্য তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর এ পর্যন্ত ১২ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে। এখান থেকে সরকার কর পেয়েছে মাত্র ১২০ কোটি টাকা। ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো সাদা করা ঠিক হবে না। আমি যদি ৩২ শতাংশ কর দিই, তাহলে কালো টাকার ক্ষেত্রে এর ওপর আরও ১০ শতাংশ জরিমানা থাকতে হবে। না হলে আমরা আগামীতে কর দেওয়া বন্ধ করে দেবো।

মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়ায় অসন্তোষের কথা জানান মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যরিস্টার নিহাদ কবীর। তিনি বলেন, ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা হচ্ছে। আর অর্থমন্ত্রী বলছেন, এতে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার তো সেটা ভালো লাগে না। কারণ আমি সাড়ে ৩২ শতাংশ কর দিই।

তিনি বলেন, আমরা যখন কর ব্যবস্থাপনার সংস্কার নিয়ে কথা বলি, সেটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কিন্তু সেটা না করে কেউ কেউ আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা আমাদের বৈধ আয় কোথায় ব্যয় করব, সেটা নিয়ে অন্যদের কথা না বললেও চলবে।

দেশের টাকা বিদেশে পাচাই ইস্যুতেও নিহাদ কবীর বলেন, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের সহযোগিতায় যারা দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের দিকে নজর দেওয়া দরকার।

আইসিএবি প্রেসিডেন্ট মাহমাদুল হাসান খসরু দেশে জিডিপির তুলনায় রাজস্বের হার কম হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে এনবিআরের সঙ্গে আইসিএবির সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করে কোম্পানির নিরীক্ষিত প্রতিবেদন যাচাইয়ের (ডক্যুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম, ডিভিএস) বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তুলে ধরেন।

আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান কর ব্যবস্থায় সংস্কারে গুরুত্ব দেন। এছাড়া বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ের পরিবর্তে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া, ঘাটতি অর্থায়ন বাড়ানো এবং এ লক্ষ্যে বিদেশি উৎস থেকে তহবিলের জোগান দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে কর হার কমানোর প্রস্তাব দেন।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিাসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, আইসিএবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ বড়ুয়া, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, আইসিএবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিয়া হাওলাদার, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) প্রেসিডেন্ট রূপালী হক চৌধুরী, দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন মাসুম, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি শারমিন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

ইআরএফ টপ নিউজ বাজেট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে তরুণের মৃত্যু
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১০

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর