স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হেফাজতের ৪ দাবি
৫ মে ২০২১ ০০:৫৭
ঢাকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চারটি দাবি তুলে ধরেছেন সদ্য কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ধরপাকড় বন্ধসহ কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়ার অনুরোধও রয়েছে তাদের এই চার দাবির মধ্যে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারও চান তারা।
মঙ্গলবার (৪ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে প্রবেশ করেন হেফাজত নেতারা। পরে রাত ১২টার দিকে হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা থেকে বের হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজত নেতাদের সাক্ষাতের সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
হেফাজতের নেতাদের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সদ্যবিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী। তার সঙ্গে আরও ছিলেন দেওয়ানার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা আতাউল্লাহ আশরাফ, মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি জসিমউদ্দিন।
আরও পড়ুন- ফের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় হেফাজত নেতারা
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে হেফাজত নেতারা জানান, তারা মন্ত্রীর কাছে চারটি দাবি তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে শুরুতেই হেফাজতের গত আন্দোলনকে (স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর বিরোধিতা করে বিক্ষোভ) কেন্দ্র করে সারাদেশে গ্রেফতার হওয়া ‘আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলিমদের’ দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা। এছাড়া দেশব্যাপী চলমান গ্রেফতার অভিযানের কারণে রমজান মাসে ইবাদত বন্দেগি করতে না পারা ‘আলেম-উলামা ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ’দের গ্রেফতার আতঙ্ক ও হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়ার আবেদনও জানান তারা।
এর পাশাপাশি ২০১৩ সালে হেফাজতের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছিল, আগের আলোচনা অনুযায়ী সেই মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করার দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন হেফাজতের নেতারা। একইসঙ্গে সরকারের নির্দেশে বন্ধ থাকা কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার দাবিও তারা জানিয়েছেন।
এর আগে, গত ১৯ এপ্রিলও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। হেফাজতে ইসলামের ওই সময়কার মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, হেফাজত নেতা ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, তার ভাতিজা মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীসহ কমপক্ষে ১০ নেতা সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে সেদিনও কী বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তারা আলোচনা করেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি।
এর মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল রাতে আচমকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন ওই কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অবশ্য আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়। তবে এই আহ্বায়ক কমিটির কোনো কার্যক্রম এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
এদিকে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনকের জন্মশতবর্ষের আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা দিবসের আগে-পরে দেশব্যাপী সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৭ জন প্রাণ হারান। এসব ঘটনায় জড়িত অভিযোগে হেফাজতের বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ অন্তত এক ডজন নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের কেউ রিমান্ডে, কেউ কারাগারে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর