সুপ্রিম কোর্ট বারে আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণা, বিএনপিপন্থিদের না
৪ মে ২০২১ ২৩:১০
ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় (এজিএম) দুই পক্ষের মধ্যে বাগতিণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একপক্ষ সদ্য সাবেক সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তবে সমিতির সম্পাদক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিশেষ সভা মুলতবি ঘোষণা করেছেন।
সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে মঙ্গলবার (৪ মে) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহিদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এ বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চলতি বছরের ১০ ও ১১ মার্চ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এ আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। ২০২১-২০২২ সেশনের এ নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি পদসহ আটটি পদে জয়ী হয় সরকার সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা)। অন্যদিকে সম্পাদক পদসহ বাকি ছয়টি পদে জয়ী হয় বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল)।
ওই নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন সাদা প্যানেলের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। অন্যদিকে নীল প্যানেলের রুহুল কুদ্দুস কাজল টানা দ্বিতীয়বারের মতো সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
নির্বাচনের পর গত ১৫ মার্চ আবদুল মতিন খসরু নমুনা পরীক্ষা করিয়ে করোনা পজিটিভ আসেন। ১৬ মার্চ তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন। এর মধ্যে ১২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২১ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সভার শেষ পর্যায়ে বিদায়ী কমিটি নতুন কমিটিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছ জানায়।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় সেদিন নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মতিন খসরু সভায় অংশ নিতে পারেননি। এর দুই দিন পর ১৪ এপ্রিল আবদুল মতিন খসরু মারা গেলে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির পদটি শূন্য হয়ে যায়। পরে ২৭ এপ্রিল এজিএম আহ্বানের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন সমিতির সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল)।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মতিন খসরু ১৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করায় সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সভাপতির শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক বিশেষ সাধারণ সভা ৪ মে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
সে অনুযায়ী মঙ্গলবার বিশেষ সভা শুরু হয়। সভায় সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি সভা পরিচালনা করবেন। সঙ্গে সঙ্গে ‘সাদা প্যানেল’ থেকে নির্বাচিত সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা ঘোষণা দেন, সভায় সভাপতিত্ব করবেন তিনি। এর বিরোধিতা করে সম্পাদক বলেন, আপনি সভাপতিত্ব করবেন— সভায় এ ধরনের কোনো কার্যবিবরণী পাস হয়নি। সিনিয়র আরেকজন সহসভাপতি আছেন। জবাবে শফিক উল্ল্যা বলেন, আমিই আজকের সভার সভাপতি। এই সভা থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম আমিন উদ্দিন।
তার এ ঘোষণায় সরকার সমর্থকরা সমর্থন দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করলেও ঘোষণার বিরোধিতা করে বিএনপি সমর্থকরা হৈ চৈ শুরু করেন। পরে সম্পাদক সভা মুলতবির ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে সাংবদিকদের প্রশ্নে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আমি শুনতে পেলাম আজ বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আমাকে যদি আবারও সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, আমি বিগত দুই বছরের মতো বারের উন্নয়ন কাজ করে যাব।
পরে সম্পাদক একটি বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আহ্বান করা আজকের বিশেষ সাধারণ সভা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।
পরে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান বার সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভাপতি পদ পূরণের লক্ষ্যে সহসভাপতির (তিনি নিজে) সভাপতিত্বে ও সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের সঞ্চালনায় বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত সমিতির সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ২০১২১-২০২২ এর অবশিষ্ট মেয়াদে সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করেছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর