হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী রিমান্ডে
৬ মে ২০২১ ২২:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৬ মে) চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবাল এ আদেশ দিয়েছেন তার আইনজীবী নেজাম উদ্দিন জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া সহিংসতার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত পাঁচদিন মঞ্জুর করেছেন।’
হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলার এজাহারে জাকারিয়া নোমান ফয়জী আসামি হিসেবে আছেন বলে এসপি জানিয়েছেন।
বুধবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের একটি দল কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে। জাকারিয়া নোমান ফয়জীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মেখল গ্রামে। তার বাবা নোমান ফয়জী হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন। গত ২২ মার্চ তিনি মারা যান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন গত ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ভাঙচুর, স্থানীয় ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত হয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে হেফাজতে ইসলামের চার কর্মী নিহত হন।
এর জেরে, তিনদিন ধরে হাটহাজারী থানার অদূরে হেফাজতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইটের দেওয়াল তুলে অবরোধ তৈরি করে রাখে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই ঘটনার জেরে চট্টগ্রামের পটিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় প্রথমে সাতটি মামলা দায়ের করা হয়, যাতে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। গত ২২ এপ্রিল আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে দু’টিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীকে। অপর মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলালসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
এদিকে সংঘাতের পর থেকে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক হারুন ইজাহারসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষপর্যায়ের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতার নামে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল হেফাজতে ইসলাম, যাতে ইন্ধন দিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত।
তবে হেফাজতের সাবেক আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী কয়েকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না। এমনকি হেফাজতে ইসলাম ‘সরকার বিরোধী’ নয় বা বর্তমান সরকারকে হটিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসানোর কোনো এজেন্ডা হেফাজতের ছিল না বলে বাবুনগরীর দাবি করেন। এ অবস্থায় হেফাজত নেতাদের একটি দল দুই দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠকও করেন। তবে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে।
গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে জুনায়েদ বাবুনগরী ফেসবুকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। আবার এ ঘোষণার রেশ না কাটতেই রাত সাড়ে তিনটার দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ফেসবুক পেজ থেকে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথাও প্রচার করা হয়। পরে আরও দু’জনকে সদস্য হিসেবে সংযুক্ত করার কথাও জানানো হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এমও