‘ঈদের অবাধ শপিংয়ের কারণে বাড়তে পারে করোনা সংক্রমণ’
৬ মে ২০২১ ২৩:২৫
ঢাকা: দেশে আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে দোকানপাট ও শপিংমলগুলো থেকে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আবারও বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) ‘কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করণীয় এবং অক্সিজেন সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আশঙ্কার কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘শপিংমল-দোকানপাটগুলোতে যেভাবে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। তাতে বলা যায়, দেশে সংক্রমণ আবারও বাড়বে। যার প্রভাব আমরা ১৬ মে’র পরে দেখতে পাব। একটা ঈদে জামাকাপড় না কিনলে কী হয়? কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে এভাবে কেনাকাটার কারণে ঈদের আনন্দটা যদি একটা ট্র্যাজেডিতে রূপ নেয়, তাহলে বিষয়টা কেমন হবে? এতে করে শুধু ওই ব্যক্তিই নয়, তার পরিবারকেও ভয়ংকর বিপদে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বাধ্য হয়ে মার্কেট খুলে দিয়েছে, কিন্তু যাওয়া না যাওয়া তো আমাদের ওপর নির্ভর করে। আমরা যদি না যাই তাহলেই তো হয়। এই জিনিসগুলো আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করে। সবকিছু সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কিন্তু আমরা দেখছি, যেভাবে মহিলারা মার্কেটে যাচ্ছে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে, এতে বিপদ অবশ্যই বাড়বে। তারপরও আমরা খুলে দিয়েছি, আমরা বলে দিয়েছি মার্কেটে মাস্ক ছাড়া কেউ ঢুকবে না। ঢুকলে জরিমানা করা হবে। তবুও এ কাজগুলোকে কেউ করছে না, কেউই মানছে না। আল্লাহ না করুক, আমাদের জন্য যেন বড় কোনো বিপদ না আসে।’
রোগী বাড়লে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে চাপ বাড়বে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসায় আমাদের ১৬ হাজার শয্যা রয়েছে। কিন্তু রোগী যদি আমাদের ৫০ হাজার বা এক লাখ আসে, তাহলে তো আমরা হাসপাতালে জায়গা দিতে পারব না। কোনো দেশ বা কোনো সরকারই এটা পারবে না। তাই আমাদের নিজেদেরই সজাগ হতে হবে। দেশকে ভালো রাখতে হবে, নিজেদের পরিবারকে ভালো রাখতে হবে। এর চাবিকাঠি কিন্তু আমাদের নিজেদের হাতেই। সরকার শুধু বলে দিতে পারবে, কিন্তু আমাদেরই মানতে হবে।’
লকডাউনের কারণে সংক্রমণ কমেছে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘সংক্রমণ কমাতে লকডাউন ছিল সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা। যদিও এটা ক্ষতি করে, অস্থিরতা তৈরি করে। কাজেই চিন্তা করেছি ব্যালেন্স করে মহানগরের ভেতর লকডাউন দিতে।’ সেইসঙ্গে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুব কাজে দিয়েছে। এই স্লোগানে সচেতনতা বেড়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে এটা অ্যাডাপ্ট করেছে। এটা আমারাও শুরু করেছি।’
মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অক্সিজেনের জন্য কীভাবে দাপাদাপি হয়েছে, সেটা আমরা দেখেছি। অ্যাম্বুলেন্সে, হাসপাতালের বারান্দায় কী হয়েছে, সেটা দেখেছি। ভারতেও এমনটা হয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা ভুলে যাই, এটা খুবই অন্যায়। আমরা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিই। অর্থনীতির ক্ষতি হয়। পরিবারের ক্ষতি হয়।’
বিপিএমসিএ সভাপতি এম এ মুবিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য সেবা অধিদদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা প্রমুখ।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম