হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণমামলা
৭ মে ২০২১ ১২:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে এবার হেফাজতে ইসলামের আরেক নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী ধর্ষণের মামলার আসামি হয়েছেন। এর আগে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) দিবাগত রাত ২টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় এক নারী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম সারাবাংলাকে জানান, মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে— ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফেসবুকের মাধ্যমে ওই নারীর সঙ্গে জাকারিয়া নোমান ফয়েজীর পরিচয় হয়। মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে মেয়েটির সঙ্গে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ও পরবর্তীতে বিয়ের প্রলোভন দেখান। নোমান ফয়জীকে বিশ্বাস করে মেয়েটি নগরী থেকে হাটহাজারীতে তার কাছে চলে যান। তাকে ২০১৯ সালের নভেম্বরে পৌর সদরে কনক বিল্ডিংয়ের নিচতলায় বাসা ভাড়া করে রাখা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘একবছর ধরে ওই বাসায় রেখে জাকারিয়া নোমান ফয়জী তার বিবাহ বর্হিভূত শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখেন। কিন্তু বিয়ে না করায় মেয়েটি শহরে খালার বাসায় চলে আসেন। এরপর আবারও বিয়ের কথা বলে তাকে আবারও ফাঁদে ফেলা হয়। শহরে বিভিন্ন বাসা ও হোটেলে নিয়ে তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন জাকারিয়া। মামুনুল হকের ঘটনার পর ওই নারী বুঝতে পারেন, তিনিও আসলে জাকারিয়া নোমানের হাতে প্রতারিত হয়েছেন। এরপর মামলা করেছেন।’
গত বুধবার (৪ মে) বিকেলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থেকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের একটি দলে জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে গ্রেফতার করে। হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন তিনি।
গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের সহিংস তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই মামলায় তিনি পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন।
আরও পড়ুন-
- হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী রিমান্ডে
- সহিংসতায় ইন্ধন: হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমান গ্রেফতার
- অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত হেফাজত নেতা বললেন— মানুষেরই ভুল হয়
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিবেলে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক জানান, জাকারিয়া নোমান ফয়জীর একাধিক নারীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, একাধিক নারীর সঙ্গে তার বিবাহ বহির্ভূত মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক সম্পর্ক ছিল।
পুলিশ সুপার আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল— হেফাজতের লক্ষ্য এবং তার বেশভূষার সঙ্গে অনৈতিক আচরণ সাংঘর্ষিক কি না? জাকারিয়া জবাব দেন— মানুষ মাত্রই ভুল হয়।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে কথিত স্ত্রী নিয়ে অবস্থানের সময় অবরুদ্ধ হন হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। এসময় মামুনুল ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। ওইদিন তাকে হেফাজতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রিসোর্ট ভেঙে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এরপর মামুনুল বেশ কিছুদিন পালিয়ে বেড়ালেও গত ১৮ এপ্রিল তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, ওই নারীর সঙ্গে তার বৈবাহিক কোনো সম্পর্ক নেই। কয়েকটি শর্ত দিয়ে চুক্তিভিত্তিক একটি সম্পর্ক রেখেছেন তিনি।
গত ৩০ এপ্রিল কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস