Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি: একে অন্যকে দুষছে যাত্রী-শ্রমিক

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ মে ২০২১ ১২:৩০

ঢাকা: দূরপাল্লার বাস না চললেও জেলার মধ্যে বাসগুলোকে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। তাতে করে তিন সপ্তাহ পর ফের সারাদেশে শুরু হয়েছে গণপরিবহনের চলাচল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলার কথা থাকলেও পরিবহন শ্রমিক ও চালকদের অভিযোগ, যাত্রীরাই স্বাস্থবিধি মেনে চলতে চান না। প্রথম দিনে সারাদিন যাত্রী না পাওয়ার অভিযোগও করছেন তারা। আর যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, অনেক বাসই অর্ধেক যাত্রী বহনের নিয়ম মানছে না। স্যানিটইজার দেওয়াসহ অন্য স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না বাসে।

বিজ্ঞাপন

বাসের চালক ও হেলপারদের দাবি, অর্ধেক সিটে যাত্রী তোলার পর তারা গেট লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও দিলেও যাত্রীরা বাসে ওঠার জন্য পাগল হয়ে যান। সিট খালি নেই বললেও জোর করে উঠতে চান। যাত্রীরাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না। তবে যাত্রীরা আবার বলছেন, বাসে ওঠার জন্য তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস না পাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে, বিধিনিষেধের সময়েও ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপেই রাজধানীতে দেখা গেছে যানজট। গণপরিবহন চালুর পর প্রথম দিনে সেই যানজট তীব্র হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ মে) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মিরপুর, তেজগাঁও, কল্যাণপুর, মগবাজার, শান্তিনদগর, পল্টন ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে গণপরিবহনে এসব চিত্র দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে দেখা যায়, বিকল্প পরিবহন, নিউ ভিশন, ঢাকার চাকা, বিআরটিসি, ৮ নম্বর পরিবহন বাসগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। এসব বাসে তেমন যাত্রী নেই বললেই। যাত্রীর জন্য বাসগুলো অপেক্ষা করলেও তেমন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

বিকল্প পরিবহনের চালক নইমুদ্দিন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেন, বাসে যাত্রী নেই। আগের ট্রিপে মিরপুর থেকে চারজন যাত্রী নিয়ে এসেছি। এখন যাওয়ার সময় কতজন হবে, জানি না। সকালে ভরা ছিল। ভরা মানে অর্ধেক আসন খালি রেখে যে কয়জন হয়, সেই কয়জন যাত্রী ছিল। করোনার কারণে যাত্রী বাসে উঠতে চায় না। আবার জ্যাম লাগবে ভেবে সবাই পাঠাও-উবারে চলে যায়। মোটরসাইকেলে টাকা বেশি লাগলেও দেয়, কিন্তু বাসে উঠলেই ভাড়া নিয়ে মারামারি লেগে যায়।

হেলপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, যেভাবে যাত্রী হচ্ছে তাতে গাড়ির তেলের টাকাই উঠবে না। অফিসের সময় কিছুটা যাত্রী হয়ে থাকে। এরপর আর যাত্রী নেই। রোজা মাসে সবাই ইফতারির আগে বাসায় পৌঁছাতে চায়। ফলে বাসে উঠলে সময় বেশি লাগবে ভেবে পাঠাও-উবারে নিয়ে চলে যায়।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার চাকার হেলপার রবিউল ইসলামের সঙ্গে দুপুর ১টার দিকে কথা হয় বাড্ডা এলাকায়। উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়ার পথে যানজটে আটকে ছিল তার বাস। ভেতরে যাত্রী ছিলেন চার জন। রবিউল জানালেন, ঠিক আগের ট্রিপে মতিঝিল থেকে উত্তরা গিয়েছেন ছয় জন যাত্রী নিয়ে। কেন যাত্রী বাসে উঠছে না, বুঝতে পারছি না। অফিস ছুটি হলে আবার কিছু যাত্রী হবে বলে আশা করছেন।

পাঠাওয়ের একটি বাইকে শাহজাদপুর থেকে কাকরাইল যাচ্ছিলেন মিজানুর রহমান। যানজটে আটকে ছিলেন তিনিও। বললেন, বাসে সময় বেশি লাগছে বলেই রাইড শেয়ারিং ব্যবহার করছেন। বাসের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় এখন রাইড শেয়ারিংয়ের খরচ আর বাস ভাড়ার ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানালেন তিনি।

বিকেল ৩টার দিকে কাকরাইল মোড়ে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস থেকে নামছিলেন রফিকুল ইসলাম। জানালেন, নতুন বাজার এলাকা থেকে যানজট ঠেলে এসেছেন একঘণ্টারও বেশি সময় লাগিয়ে। এই সময়ে বাসে খুব বেশি যাত্রী ছিল না। তবে বাসে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়নি বলে জানালেন।

বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ মোড়ে কথা হয় তানজিল পরিবহনের চালক ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালাচ্ছি। যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্ক থাকে না। আমরা বলার পর মাস্ক পরে মুখে। আবার অনেকে তর্কও করে। তবে আমরা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রয়োজনে খালি গাড়ি যাবে, তবুও কাউকে মাস্ক ছাড়া উঠতে দেবো না। যাত্রীরাই মূলত জোর করে উঠতে চায়। সব সিটেই বসতে চায়। অনেক সময় ধাক্কাধাক্কিও হয় এসব নিয়ে।

বিকেল ৫টার দিকে বাংলামোটর ও কারওয়ান বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অনেকেই বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ চাপ থাকায় বাস আসতে সময় লাগছে। যেসব বাস আসছে, সেগুলো গেট লাগানো থাকায় উঠতে পারছেন না কেউ। কোনো বাস দুয়েকজন যাত্রী নেওয়ার জন্য থামলেও সেই বাসে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যাচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, অনেক বাসই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাড়তি যাত্রী বহন করছে।

সন্ধ্যার পর মহাখালী এলাকায় কথা হয় বেসরকারি একটি অফিসে কর্মরত মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। মাত্রই উত্তরা থেকে এসেছেন। বললেন, সকালে অফিসের কাজে উত্তরা গিয়েছিলাম। ওই সময় যাত্রীর বেশ চাপ ছিল। বাসে যে একেবারে অর্ধেক যাত্রীই ছিল, তা নয়। দুয়েকজন বেশিই ছিল বেশিরভাগ সময়। তবে ফেরার পথে যাত্রীর চাপ ছিল না। অর্ধেকেরও দুয়েকজন কম যাত্রী নিয়েই এসেছে। বলাকা পরিবহনের বাসটিতেও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা ছিল না বলে জানালেন মাহফুজুর।

এদিকে, বরাবরের মতোই ভাড়া নিয়েও অভিযোগ রয়েছে দুই পক্ষেরই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী বহন করলে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। চালক-হেলপারদের অভিযোগ, তারা অর্ধেক যাত্রী বহন করলেও যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চান না। অন্যদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করে অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করছে। তাহলে তারা কেন বাড়তি ভাড়া দেবেন!

জানতে চাইলে বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, যাত্রীদের নিজে থেকে সচেতন হতে হবে। চালক বা হেলপার কেন বার বার বলবেন যে আপনারা মাস্ক পরুন। যে মানছে না, তারও তো জীবনের ভয় থাকা উচিত। তার কাছ থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাস চালাব। যাত্রীদের উচিত হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গণপরিবহন ব্যবহার করা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, গণপরিবহন ছাড়ার প্রথম দিনেই দেখেন ঢাকা শহরে কী পরিমাণ মানুষ নেমে এসেছে। এর মধ্যে যদি বাসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যাবে। বাস মালিক ও শ্রমিকরা যতই বলুক না কেন, কখনোই তারা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। আসন খালি রাখা হচ্ছে, কিন্তু স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক স্প্রে করার কোনো চিত্র চোখে পড়েনি। এছাড়া গেটে যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়ার কথা, তাও চোখে পড়েনি। এ অবস্থায় সবাইকে সচেতন হয়েই চলতে হবে। তা না হলে করোনা মোকাবিলা সফল হওয়া যাবে না।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর