Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহামারি পূর্ব দিকে এগোচ্ছে, ভারতের সতর্কবার্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৭ মে ২০২১ ২১:১৫

পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত এবং করোনায় মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে থাকার পর ‘মহামারি এখন ক্রমশঃ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে’ বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়েছে।

আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড ও বিহার-পূর্ব ভারতের এই পাঁচ রাজ্যের মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যগুলোর কর্মকর্তাদের সাথে আপদকালীন বৈঠকের পর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ওই রাজ্যগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে নানান ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে বিবিসি।

এদিকে, এমন এক সময়ে এই সতর্কবার্তা এলো যখন দৈনিক ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ অতিক্রম করছে, মৃত্যুও পৌঁছাচ্ছে চার হাজারের কাছাকাছি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার (৭ মে) সকালে সর্বশেষ ২৪ ঘন্টার সরকারি যে হিসাব প্রকাশিত হয়েছে তাতে রেকর্ড চার লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জনের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৬১৪ জনের।

করোনা আক্রান্ত এবং মৃতের উভয় পরিসংখ্যানেই একটা বড় ভূমিকা রেখেছে পূর্ব ভারতের পাঁচ রাজ্য, যদিও এতদিন সবচেয়ে উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো আসছিল মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কর্ণাটক, কেরালা, পাঞ্জাব বা উত্তর প্রদেশের মতো দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেই।

দক্ষিণ, পশ্চিম বা উত্তর ভারতের তুলনায় পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি এতদিন ছিল কিছুটা ভাল, কিন্তু তা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে ইঙ্গিত পাওয়ার পরই বুধবার (৫ মে) বিকেলে পূর্বের পাঁচ রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ আমলা এবং বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

পরে, বুধবার শেষ রাতে দিল্লিতে জারি করা এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যাবতীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ এদিকেই দিকনির্দেশ করছে যে করোনা মহামারি ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। পূর্ব প্রান্তের রাজ্যগুলোতে দৈনিক শনাক্ত হওয়া সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুহারও, জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে মহামারির ধাক্কা মোকাবিলায় জরুরি কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পদক্ষেপগুলো হলো —

পাঁচ রাজ্যকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেখানে যে ছাত্রছাত্রীরা চিকিৎসা শিক্ষাক্রম বা এমবিবিএস এবং নার্সিংয়ের ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন, কিংবা যারা ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছেন – তাদের অবিলম্বে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত করা হোক।

পাঁচ রাজ্যের অনেকগুলোতেই ‘পজিটিভিটি রেট’ এখন ২০ শতাংশের বেশি – অর্থাৎ যারা কোভিড পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের প্রতি পাঁচজনে অন্তত একজনের রেজাল্ট পজিটিভ আসছে। এই জেলাগুলোতে বিশেষ নজর দিয়ে সেখানে পরীক্ষা বাড়ানো, আক্রান্তদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করতে, যে কোনো ধরনের ভিড় বা জমায়েত এড়ানো – এগুলো নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

রাজ্যগুলোকে বলা হয়েছে প্রতি জেলায় অন্তত একটি করে অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গা চিহ্নিত করতে। কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সারা দেশের প্রত্যেক জেলাতেই অন্তত একটি অক্সিজেন ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট গড়ে তোলা হবে।

রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট বা ভারত বায়োটেকের মতো ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের বকেয়া অর্থ অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে – যাতে সেখানে ভ্যাকসিনের চালান অব্যাহত থাকে এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগের তৃতীয় পর্ব নির্বিঘ্নে চলতে পারে।

প্রসঙ্গত, ভারতের কয়েকটি রাজ্যই এখন অভিযোগ করছে তারা ভ্যাকসিনের চালান ঠিকমতো পাচ্ছে না। এ মাসের শেষ থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার যে পরিকল্পনা ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল তাও এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে।

পূর্ব ভারতে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের?

বিহারে সোমবারেও করোনা আক্রান্ত হিসেবে মোট শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ১১ হাজার জন। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও সেই গড় ছিল দশ হাজারের নিচে। অথচ বৃহস্পতিবার (৬ মে) সেই সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারে পৌঁছেছে, গোটা রাজ্যেই ১৫ মে পর্যন্ত জারি করা হয়েছে লকডাউন। পুরো রাজ্যেই পজিটিভিটি রেট এখন ২০ শতাংশের বেশি। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। আসামে সপ্তাহ দুয়েক আগেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজারের নিচে, এখন তা পাঁচ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে।

পূর্ব ভারতের আরেকটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও মাত্র দিনদশেক আগেও প্রতিদিন ১০-১২ হাজার করে নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছিলেন। এখন সেখানেও দৈনিক সংক্রমণ ১৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একইসঙ্গে, করোনায় মৃত্যুহারও সমানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

তবে করোনা মহামারির গতিপথ এখন ‘পূর্বমুখী’ বলে ভারতের বিশেষজ্ঞরা দাবি করলেও উত্তর, পশ্চিম বা দক্ষিণ ভারতের পরিস্থিতি যে রাতারাতি খুব ভাল হয়ে উঠছে, তাও নয়।

যেমনঃ মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাট ও উত্তরপ্রদেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলেও এখনও সারা ভারতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ কিন্তু ওই রাজ্যগুলো থেকেই শনাক্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে রাজধানী দিল্লিতে নিয়ম করে দৈনিক ২০ হাজারের করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন।

সারাবাংলা/একেএম

কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস ভারত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর