Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেরি ঘাট লোকারণ্য, ‘গভীর রাতের সিদ্ধান্তে’ ভোগান্তি- ক্ষোভ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৮ মে ২০২১ ১৩:৪৪

মুন্সীগঞ্জ মানিকগঞ্জ: সকাল থেকেই শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে মানুষের ঢল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি প্রতিরোধে দূরপাল্লার যানচলাচল বন্ধ হলেও ‘নানা উপায়ে’ তারা এসেছেন ঘাটে। গন্তব্য বাড়ি। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ঈদুল ফিতর। তাই করোনা পরিস্থিতিতেও বাড়ি ফেরাকেই শ্রেয় মনে করেছেন তারা। কিন্তু ঘাটে এসেই হতবাক। জানতে পারলেন— আগের রাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ, রাতে কেবল জরুরি পণ্যবাহী ও লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছেড়ে যেতে পারবে ফেরি!

বিজ্ঞাপন

একদিকে রমজান মাস। অন্যদিকে বৈশাখের কড়া রোদে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ঘাটে। এর মধ্যে আচমকা ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানতে পেরে তাদের মাথায় হাত। ত্যক্ত-বিরক্ত যাত্রীরা তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বলছেন, ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে সেটি আগেই সবাইকে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। গভীর রাতের এমন ঘোষণা যে ভোগান্তি তৈরি করেছে তার দায় কে নেবে— প্রশ্ন তাদের।

শনিবার (৮ মে) সকাল থেকেই শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে দেখা গেছে এমন মানুষের তীব্র ঢল। তারা বলছেন, মূলত ঈদ সামনে রেখে ঘরে ফিরতেই তারা ঘাটে এসেছিলেন। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় তারা বিভিন্ন ধরনের পরিবহনে চড়ে ভেঙে ভেঙে অনেক কষ্টে ঘাটে এসে পৌঁছেছেন। এ অবস্থায় ঘাট পার হতে না পারলে তা অত্যন্ত অমানবিক হবে।

এর আগে, শুক্রবার (৭ মে) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটএ) জানায়, ফেরিতে করে দিনের বেলায় যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকবে। রাতে কেবল জরুরি পণ্য ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করবে ফেরিগুলো।

শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে সারাবাংলার মুন্সীগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট শহীদ ই হাসান তুহিন দুপুর ১২টার দিকে জানান, সেখানে বর্তমানে কয়েক হাজার যাত্রী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছেন। ফেরি বন্ধ থাকায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ হাজারও মানুষ। অপেক্ষায় আছে লাশবাহী অর্ধশত অ্যাম্বুলেন্সও। যাত্রীদের অভিযোগ, গভীর রাতের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন তারা। ক্ষুব্ধ আচরণ করছেন ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের সঙ্গে।

পাটুরিয়া ঘাট এলাকা থেকে প্রায় একই সময় সারাবাংলার মানিকগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট রিপন আনসারী জানান, সেখানকার পরিস্থিতিও প্রায় একইরকম। বলা চলে ভোর থেকেই যাত্রীরা ঘাটে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকলেও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় এলাকায় জনসমাগম বাড়ছেই। রোজার মধ্যে তীব্র রোদে খোলা আকাশের নিচে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির অভিযোগ করছেন।

বিজ্ঞাপন

তবে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া দুই ঘাটের কোনোটি থেকেই যাত্রীরা সরছেন না। তারা বলছেন, রাতে যেহেতু ফেরি চলাচল করবে, ফলে রাত পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন। রাতে ফেরিতে কেবল জরুরি পণ্য ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের অনুমতি আছে— এ বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে তারা বলছেন, ফেরি চললে কোনো না কোনো ব্যবস্থা হবেই— এমনটিই মনে করছেন তারা।

এদিকে, যাত্রীদের চাপের মুখে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিয়ে কোনো ফেরি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালের একটি ঘটনা থেকেই তারা এ বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানা গেছে, সকালে কুঞ্জলতা নামের একটি ফেরিতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স উঠতেই হাজার হাজার যাত্রী সেই ফেরিতে উঠে পড়েন। বাধ্য হয়ে তাদের নিয়ে ফেরিটি ছেড়ে যায় ঘাট। এরপর আর কোনো ফেরি শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি।

শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিএ ট্রাফিক ব্যবস্থাপক সাহাদাৎ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, বিধিনিষেধে কর্মস্থল ত্যাগ করার বিষয়ে সরকারিভাবে  আছে। তারপরও ঈদ সামনে রেখে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের সকাল থেকেই শিমুলিয়া ঘাটে আসতে শুরু করে। সকালে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে শিমুলিয়া পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে মাইকিং করে ঘাট ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না।

একই পরিস্থিতি দেখা গেছে পাটুরিয়া ঘাটেও। বিআইডাব্লিইটিসি আরিচা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম জিল্লুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, দুপুরে মানবিক কারণ বিবেচনায় নিয়ে রোগীবাহী কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে দু’টি ফেরি দিয়ে যাত্রী পারপার করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে এত যাত্রীর চাপ সামলানো সম্ভব না। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আর কোনো ফেরি চলবে না। রাতে কেবল পণ্যবাহী যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করা হবে ফেরি দিয়ে।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে সাধারণত ১৬টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে পারপার হয়। চলমান করোনাভাইরাসের লকডাউনে গত ১৪ এপ্রিল থেকে সীমিত করা হয় ফেরি চলাচল। লকডাউনের শুরুতে দিনের বেলায় দু’তিনটি ফেরি ছাড়া হলেও শুক্রবার থেকে যাত্রী ও জরুরি প্রয়োজনে আসা যানবাহনের চাপ বেশি থাকা প্রায় সব কয়টি ফেরি চলাচল করে এ নৌপথে। এসব ফেরিতে জরুরি প্রয়োজনে আসা যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক, কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারের কথা থাকলেও সাধারণ যাত্রীদরেই বেশি পারাপার হতে দেখা যায়। এ কারণে বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে আজ সকাল থেকে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে।

শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা বলছেন, রোজা, বৈশাখের কড়া আবহাওয়া ও মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তাদের পারাপারের ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত। পাটুরিয়া ঘাটে অপেক্ষমাণ যশোরের এক যাত্রী আমিন হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, মধ্যরাতে ফেরি বন্ধের ঘোষণা হয়েছে। সেটি জানতে না পারার কারণে ঘাটে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছি। উল্টো পথেও ফিরতে পারছি না। ঘাট কর্তৃপক্ষ যদি মানবিক দৃষ্টিতে দেখে ঘাটে জড়ো হওয়া মানুষগুলো পারাপার করত, তাহলে হাজারো মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হতো।

যাত্রীদের এই অভিযোগের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা সারাবাংলাকে বলেন, সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যেও শুক্রবার দিনভর ফেরিতে পার হয়েছেন হাজারো ঘরমুখী যাত্রী। এসব যাত্রীদের কারণে ফেরিতে ওঠার সুযোগ পায়নি জরুরি পরিবহনগুলো। এ অবস্থায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ীই দিনের বেলা ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

একই কথা বলছেন বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও গতকাল (শুক্রবার) ফেরিগুলোতে মানুষের যে ঢল দেখা গেছে, তাতে বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাত পৌনে ১২টায়। তবে মরদেহ ও জরুরি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স,  গাড়ি, ভ্যান চলাচলের জন্য ফেরির ব্যবস্থা করা আছে।’

তিনি বলেন, মানুষ যে পরিস্থিতি তৈরি করছে, তাতে আমরা ভয় পাচ্ছি করোনাভাইরাস কতটা ছড়িয়ে পড়ে। আবার এভাবে ছড়িয়ে পড়লে আবার মানুষই সমালোচনা করবে যে আমরা মানুষদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেইনি। তাই এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার ঈদে সবাইকে কর্মস্থলে থাকতে বলেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন— যে যেখানেই আছেন, সেখানেই যেন ঈদ করেন। তাই ফেরিতে যাত্রী পারাপারের সুযোগ নেই। আমরা মানুষকে কনভিন্স করার চেষ্টা করছি।

সারাবাংলা/জেআর/এএম/টিআর

পাটুরিয়া ঘাট শিমুলিয়া ঘাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর