Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাবলিকে নেই ক্লাস-পরীক্ষা, সেশনজটের শঙ্কায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ মে ২০২১ ২২:০৮

ঢাকা: করোনা মহামারিতে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে কমবেশি সচল রাখা হলেও বন্ধ রয়েছে সব শ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যদিও দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কিছু কিছু অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলতে গেলে একেবারেই বন্ধ। যদিও দুয়েকমাস আগে সরকার ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ঈদুল ফিতরের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হবে। তবে সম্প্রতি দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা সেশনজট আর পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

দেশের চারটি বিভাগীয় শহরের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষর্থী সারাবাংলাকে বলেছেন, এই অনিশ্চয়তার কারণে তারা ধীরে ধীরে বিচলিত হয়ে পড়ছেন। শুরুতে মহামারি চলে যাবে কিংবা অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার আশায় থেকে অনেকটা নির্ভার ছিলেন তারা। তবে এ বছর করোনা মহামারি নতুন দিকে মোড় নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। পরীক্ষা আটকে থাকায় ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী এখন রয়েছেন দীর্ঘ সেশনজটের শঙ্কায়।

বিজ্ঞাপন

আনিকা তাবাস্মুম। পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। তিনি জানাচ্ছেন, তাদের মাস্টার্সের শেষ পরীক্ষাটি মহামারির কারণে আটকে যায় ২০২০ সালের মার্চে। যেটি নেওয়া হয়েছে এ বছরের এপ্রিলে। এখন আবার ফল প্রকাশ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সারাবাংলাকে আনিকা বলেন, ‘আমাদের বিভাগে কোনো সেশনজট ছিল না। কিন্তু মাহামারির কারণে সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। এখন হয়তো আমরা ভালো কোনো চাকরিতে থাকতাম। কিন্তু সেখানে অপেক্ষা করছি মাস্টার্সের ফলের জন্য।’

ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা হয়নি। এখন মাস্টার্স পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা বসে আছি চতুর্থ বর্ষে। মহামারি আমাদের জীবন নেওয়ার পাশাপাশি বয়সও কেড়ে নিচ্ছে। এই অবস্থা যদি আরও কয়েকবছর দীর্ঘ হয় তাহলে আমাদের অনেকেই হয়তো সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স হারাবেন।’

জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী কিংবা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগও প্রায় একইরকম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনই আটকে আছে একটি কিংবা দুটি পরীক্ষায়। প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আছেন পরের বর্ষে ওঠার অপেক্ষায়। এসব শিক্ষার্থীদের অনেকে আবার অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেও (ইউজিসি)। তারা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা আর সেশন জট কমানোর দাবি জানাচ্ছেন। আর ইউজিসি বলছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গেল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করে রেখেছে। সেই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনতে অনলাইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে তাগিদ দিয়েছে ইউজিসি।

ইউজিসির সদস্য সাজ্জাদ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহামারি পরিস্থিতি আরও দীর্ঘ হবে কি না সেটি এখনো কেউ বলতে পারছে না। হতেও পারে। তাহলে কি শিক্ষার্থীরা বসেই থাকবে? তাদের বয়স বসে থাকবে? এরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হলে অনলাইনে পরীক্ষা নিতেই হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরীক্ষা নিতে তাগিদ দিয়েছি।’

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষা নিতে হবে এতে কোনো সন্দেহ থাকা যাবে না। তবে মূল্যায়নটা যেন সঠিক হয়। এজন্য ইউজিসি তাদের একটি গাইডলাইন দিয়েছে। যেখানে মৌখিক পরীক্ষা এবং সৃজনশীল প্রশ্নে জোর দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব-শরীরেও পরীক্ষা নিতে পারবে।’

পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ দিতে গঠিত কমিটির প্রধান, ইউজিসি সদস্য দিল আফরোজা বেগম বলছেন, ‘এক্ষেত্রে বিদ্যুৎসুবিধা ও ইন্টারনেটের গতি এবং শিক্ষার্থীদের যেন ডিভাইস থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষা এমনভাবে নিতে হবে যাতে করে ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এই বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মহামারি এখন আরও তীব্র হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। তবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। শিক্ষার্থীরা সেশনজটের যে আশঙ্কা করছেন, আমরা চেষ্টা করব সেটি যেন সত্য না হয়।’

প্রসঙ্গত, সারাদেশে বর্তমানে ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। যাদের অনেকেই রয়েছেন শিক্ষাজীবনের একেবারে প্রান্তে। গেল বছর মহামারির কারণে দেওয়া লকডাউনের কারণে দেড় বছর ধরে তাদের শিক্ষাজীবন আটকে রয়েছে। এ বছর ২৪ মে ক্লাস রুম খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেটি আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে অনিশ্চিত তিন লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন।

সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম

৩ লাখ শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর