সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যর্থ: যুব ইউনিয়ন
৯ মে ২০২১ ২৩:১২
বর্তমান সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের নেতারা। যেকোন প্রক্রিয়ায় প্রবৃদ্ধি সূচকের সংখ্যা পুরণে সরকারের যে প্রচেষ্টা, তা নিছক ব্যর্থতাকে আড়ালের কৌশল বলেও উল্লেখ করেন তারা।
কর্মসংস্থানমুখী উন্নয়ন বাজেটের দাবিতে দেশব্যাপী যুব ইউনিয়নের বিক্ষোভ কর্মসুচির অংশ হিসেবে রোববার (৯ মে) ঢাকায় পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদের সভাপতিত্বে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন— সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ। এ সময় সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল, জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, সহসাধারণ সম্পাদক হাবিব ইমন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি গোলাম রাব্বি খান, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আজিমসহ আরও অনেকই উপস্থিত ছিলেন।
যুবনেতা রিয়াদ বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সমাজের দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সামনে জীবন-জীবিকার সংকট। এই মুহূর্তে বৃহত্তর তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তবে যুবসমাজের বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, জাতীয় গড়ের আড়াইগুণেরও বেশি। মোট বেকারত্বের মধ্যে বেকার যুবকদের সংখ্যা ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৯ সালের বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি তিনজন স্নাতকের মধ্যে একজন বেকার রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার সেই দিকে যথাযথ দৃষ্টি না দিয়ে বন্ধ্যা প্রবৃদ্ধি সৃষ্টিতে আগ্রহী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও কর্মসংস্থান সমস্যা সমাধানে তা সাফল্য দেখাতে পারেনি। যে উন্নয়ন পরিকল্পনায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না, তা যতই চকচকে হোক না কেন, প্রকারন্তরে তা ফাঁপা এবং সরকারের ব্যর্থতাকে আড়ালের অপকৌশল মাত্র।
রিয়াদ বলেন, গত বছর করোনায় চাকরিচ্যুত হয়েছিল শতকরা ৩৬ জন মানুষ। অনেকের চাকরি থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাননি। করোনা সংকটে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই বিপদগ্রস্থ আছে এখনো। করোনার কারণে নতুন করে দারিদ্র্য বাড়ছে। বিআইডিএস বলছে, নতুন করে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্রতার কাতারে যুক্ত হয়েছেন। অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ বা মন্দার কারণে জনগণের চাকরির ক্ষতি হচ্ছে, নিয়মিত বেতন না পাওয়া, কম বেতন পাওয়া— বিশেষ করে বেসরকারি চাকুরিজীবীদের বেলায় এমনটি ঘটছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে। চাকরির বাজার হ্রাস পাবার কারণে অনেক তরুণকে হতাশার মধ্যে ফেলেছে। তরুণ চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে (নিউ নরমাল সিচুয়েশন) তীব্র উদ্বেগ এবং চাকরির বাজারে করোনার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে সময় কাটাতে দেখা যায়।
যুব ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, করোনার প্রথম চার মাসেই বেকারত্ব বেড়েছিল ১০ গুণ। আর্থিক সংকটে পড়া ৪৬ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে এবং ৪৩ শতাংশের বেশি পরিবার আত্মীয়স্বজনের সাহায্য-সহায়তার ওপর নির্ভর করে সংসার চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শ্রমবাজারের জন্য দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মীদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পড়াশোনা বিশেষ দক্ষতার অভাবে পড়াশুনা সম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে না। কলেজের স্নাতকদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশই পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন কর্মরত, প্রায় অর্ধেক বেকার রয়েছে। অধিকন্তু, যুব নারী গ্র্যাজুয়েটদের বেকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। স্নাতকোত্তর হওয়ার দুই বছর পরে দেখা গেছে, নারী স্নাতকদের ৩৩ শতাংশ পুরুষ স্নাতকের বিপরীতে বেকার রয়েছেন বলে বিভন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যুবকদের বেকারত্বকে অর্থনীতির একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি
আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, আমাদের বিভিন্ন নীতিমালাসহ জাতীয় যুবনীতি-২০১৭’এ যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি। নীতিমালায় তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও কোনো কার্যকর পরিকল্পনা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা বেকারত্বের অভিশাপ দেখতে চাই না। আমরা যুবকদের হতাশ দেখতে চাই না। আমরা যুবকদের উদ্যোগী হিসেবে দেখতে চাই। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য নতুন চাকুরি সৃষ্টি করা বা কর্মসংস্থানের উদোগ গ্রহণের জন্য বাজেটে একটি বিশেষ বরাদ্দ রাখা এখন সময়ের দাবি। বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি কার্যকর উপায় বের করতে হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস