মানুষশূন্য চবিতে ফুটেছে গ্রীষ্মের প্রাণ-প্রকৃতি
১০ মে ২০২১ ০৮:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে পুরো পৃথিবী থমকে গেলেও প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে আপন মহিমায়। গ্রীষ্মের তাপদাহে জনজীবন যখন ওষ্ঠাগত সেই সময় বর্ণিল ফুলের সমারোহে সেজেছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। পাহাড় ঘেরা ও সবুজের সমারোহে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দুই হাজার একশ একরের ক্যাম্পাসে গ্রীষ্মের রঙিন ফুল দিচ্ছে যৌবনের দোলা। এ যেন শিক্ষার্থীদের ফিরে পাওয়ার আকুলতা।
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। ঋতুর পালাবদলে ক্যাম্পাসের প্রকৃতিও ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুনত্ব নিয়ে হাজির হয়। প্রকৃতি কখনও ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকে অনিন্দ্য সুন্দর রূপে, কখনও একরাশ সজীবতা আর কদমফুলের সুভাষ নিয়ে আবির্ভাব ঘটে ‘নবযৌবনা’ বর্ষার। আবার কখনো নীল আকাশের সাদা তুলোর মতো মেঘের সঙ্গে প্রকৃতিতে শুভ্রতা ছড়ায় কাঁশফুল।
এখন চলছে গ্রীষ্ম। চারদিকে তপ্ত দুপুর। সেই তপ্ত দুপুরকে ছাপিয়ে আরেকটি চিরচেনা রূপের দেখা মিলেছে ক্যাম্পাসে। কৃঞ্চচূড়া, সোনালু, জারুলসহ বাহারি ফুলের মেলা বসেছে পাহাড়-অরণ্যে। ফুলের সৌন্দর্য ক্যাম্পাস এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। কিন্তু এবার শিক্ষার্থীরা করোনাভাইরাসের কারনে প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে ছেঁয়ে গেছে ক্যাম্পাস। এই বিদ্যাপিঠের প্রবেশ পথেই রেল স্টেশনে ডালপালা মেলে দেখা মিলবে গ্রীষ্মের রঙে রাঙা কৃষ্ণচূড়ার। যা প্রকৃতির পালাবদলে নজর কাড়ে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের। যা দেখে মনে হয় অভ্যর্থনা জানাচ্ছে সবাইকে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষ্ণচূড়া নজরে পড়বেই।
ঋতুর পালাবদলে প্রতিনিয়ত নতুনকে বরণ করে নিয়েছে চবি। তাও আবার নিত্য নতুন বাহারি ফুলের সাজে। তার মধ্যে জারুল উল্লেখযোগ্য। বেগুনি রঙে রঙিন জারুল ফুল ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্ত্বর, জয় বাংলা চত্ত্বর, জারুলতলা, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও দক্ষিণ ক্যাম্পাসসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেয়ে গেছে। এর দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য সবাইকে মোহিত করছে। যা সৌন্দর্য ব্যঞ্জনায় স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে।
সোনাঝরা রঙে ফোটে সোনালু ফুল। হলুদ রঙে হিমু সাজার প্রতিযোগিতারও কমতি নেই। ক্যাম্পাসে গ্রীষ্মের তাবদাহে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু উল্লেখযোগ্য। ক্যাম্পাসের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণ, আইইআর ইনস্টিটিউটের সক্রেটিস চত্ত্বর এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ প্রাঙ্গণে সোনালু ফুলের দেখা মেলে।
দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস ঋতুর পালাবদলে নিত্য নতুন সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। এখন যেমন ক্যাম্পাসে গ্রীষ্মকালীন ফুল ফুটেছে। এতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেন রূপে উপচে পড়ছে। কিন্তু করোনার কারণে সৌন্দর্য উপভোগ করা সেই সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় যেন দ্রুত খুলে সেই প্রত্যাশা করছি।’
পালি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের কৈলাম চাকমা বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এর মধ্যে ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেকটাই বদলে গেছে। বিশেষ করে এই সময় ক্যাম্পাসে নানান রকম ফুল ফোটে। যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। কিন্তু আমরা সেই সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, দ্রুতই মহামারি করোনা থেকে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিত্রাণ পাবে। তখন শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখরিত হবে চবি ক্যাম্পাস, সৌন্দর্য পিপাসুদের পদচারণায় সার্থক হবে প্রকৃতির বাহারি রঙে সাজা।
ছবি: বাপ্পি চাকমা, ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
সারাবাংলা/সিসি/পিটিএম